Foundation of Language Learning – Part-2
Foundation of Language Learning – Part-2
প্যাডাগোজি (Pedagogy) হল এমন একটি বিষয়বস্তু যেটি শিক্ষকতার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষারর ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । প্রাথমিক টেট, উচ্চ প্রাথমিক টেট, সেন্ট্রাল টেট এমনকি স্কুল সর্ভিস টেট এর ক্ষেত্রে প্যাডাগোজি বিষয়টি থেকে বিষয় ভিত্তিক প্যাডাগোজি (Subject Pedagogy) এর উপর প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক ব্যাপার । প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদানের জন্য এবং প্রতিটি বিষয়ের বিষয় ভিত্তিক প্যাডাগোজি তুলে ধরতে আমরা আরম্ভ করেছি Pedagogy বিভাগটি । এই বিভাগের একটি উপ-বিভাগ হলঃ বাংলা প্যাডাগোজি । বাংলা প্যাডাগোজিতে এখন আমরা আলোচনা করবো “ভাষা শিক্ষার ভিত্তি” [Foundation of Language Learning] নামক টপিকটির দ্বিতীয় অংশ । এই বিভাগের প্রতিটি টপিক দীর্ঘ আলোচনাযুক্ত, তাই একাধিক অংশে টপিক আলোচনা থাকবে । পরবর্তী বা পূর্ববর্তী অংশে যাবার জন্য পোস্টে উল্লিখিত নির্দেশ তথা Next Part বা Previous Part এ ক্লিক করুনঃ ।
প্রসঙ্গতঃ বিষয়টি মনে রাখার সুবিধার জন্য প্রতিটি টপিক আলোচনা করা হবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ।
“ভাষা শিক্ষার ভিত্তি“
26. শোনা বা শ্রবণ কয় প্রকার ?
উঃ শ্রোতার আগ্রহ অনুযায়ী শোনা বা শ্রবণ চার প্রকারের হয়ে থাকে, যথাঃ অ) সক্রিয় শ্রবণ, আ) গুরুতর শ্রবণ, ই) সহানুভূতি শ্রবণ এবং ঈ) নান্দনিক শ্রবণ ।
27. শিক্ষা ক্ষেত্রে শ্রবণ দক্ষতা বিকাশের অন্তরায়গুলি কিকি ?
উঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে শ্রবণ দক্ষতা বিকাশের অন্তরায়গুলি হল :- i. শিক্ষকের আন্তরিকতার অভাব, ii. সুস্পষ্ট উচ্চারণের অভাব, iii. সঠিক পদ্ধতি অনুসরণে পাঠ দান ও অনুশীলনের অভাব, iv. শিক্ষক-শিক্ষিকার নিম্নস্বর, কর্কশ কণ্ঠ, প্রক্ষেপনের অসামঞ্জস্যতা, মুদ্রাদোষ, v. শিক্ষার্থীর শারিরীক, মানসিক বা পরিবেশগত সমস্যা ইত্যাদি ।
28. বলা (Speaking) বলতে কি বোঝায় ?
উঃ মাতৃভাষার অন্তর্গত ধ্বনিগুলোর সঠিকভাবে উচ্চারণ, সঠিক শব্দ, শব্দগুচ্ছ ও বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে যথাযথভাবে মানের ভাব প্রকাশ করার প্রক্রিয়াকে ‘বলা’ বলা হয় । শিশুদের কথা বলা একটি সহজাত ক্ষমতা, তবে তা বেশকিছু শর্তের উপর নির্ভরশীল । শিশু তার মুখ দিয়ে অসংলগ্ন শব্দ উচ্চারণ করতে করতে এক বছরের মধ্যে কিছু অর্থযুক্ত শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে । এভাবে ধীরে ধীরে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং বলার ক্ষমতা অর্জন করে ।
29. শিশুরা কত মাস বয়সে অন্যান্য ভাষার শব্দের সাথে নিজেদের মাতৃভাষার শব্দের পার্থক্য সঠিকভাবে ধরতে পারে ?
উঃ শিশুরা অন্যান্য ভাষার শব্দের সাথে নিজেদের মাতৃভাষার শব্দের পার্থক্য সঠিকভাবে ধরতে পারে মাত্র ছয় মাস বয়সে । মাতৃভাষার শব্দের সাথে অন্যান্য ভাষার শব্দের পার্থক্য নিরূপণের ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী শিশুরা খুব অনুভুতি প্রবন হয়। তাই তাদেরকে সর্বজনীন উচ্চারণ ধ্বনির বিশারদ বলা হয়।
30. এক-শাব্দিক পর্যায় বলা হয় শিশুর কোন বয়স কে ?
উঃ শিশুরা তাদের এক বছর বয়সের আগেই কয়েকটি শব্দ বুঝতে ও বলতে পারে । সেই সব শব্দগুলিকে শিশুরা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে উচ্চারণ করলেও বয়স্ক লোকেরা সহজেই বুঝতে পারে । শিশুদের এই পর্যায়কে এক-শাব্দিক পর্যায় বলা হয় । এই পর্যায়টি দুই মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।
31. কোন সময়ে শিশুদের কথোপকথনে ব্যাকরণের প্রয়োগ হঠাৎ করেই বেড়ে যায় ?
উঃ চব্বিশ মাস থেকে ত্রিশ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের কথোপকথনে ব্যাকরণের প্রয়োগ হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এই হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ঘটনাটি শিশু মনো-ভাষাবিজ্ঞানীদের অবাক করে দেয়। এই সময়ে শিশুদের বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে বাক্যরীতির ভিন্নতাও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায় । প্রতি মাসেই বাক্যরীতির ভিন্নতা দ্বিগুণ হতে থাকে এবং তৃতীয় জন্ম দিনের আগে পর্যন্ত বাক্যরীতির ভিন্নতা প্রায় হাজারে গিয়ে পৌঁছায় ।
প্রাথমিক টেট প্রস্তুতির জন্য ক্লিক করুনঃ
উচ্চ প্রাথমিক টেট প্রস্তুতির জন্য ক্লিক করুনঃ
32. পড়া (Reading) কি ?
উঃ ভাষাগত দক্ষতার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হল পড়া বা পঠন । মুদ্রিত অক্ষর, শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বোধগম্য করে সদর্থকভাবে উচ্চারণ করার কৌশল কে বলা যায় পড়া । এই প্রক্রিয়াটি শোনা ও বলা এর সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত । শিক্ষা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া হওয়ায় পঠণের ব্যপক গুরুত্ব রয়েছে । নতুন নতুন তথ্য বা জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম হল পঠন ।
33. পঠন কয় প্রকার ?
উঃ প্রকৃতি অনুযায়ী পঠন বা পড়া দুই প্রকার যথাঃ সরব পাঠ এবং নীরব পাঠ । আবার পাঠের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী ইহা তিন প্রকার যথাঃ চর্বনা পাঠ, স্বাদনা পাঠ এবং ধারণা পাঠ ।
34. পড়ার দক্ষতা অর্জনের কৌশলগুলি কিকি ?
উঃ কিছু কৌশল অবলম্বন করে পড়ার দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব, যেমনঃ i. পড়ার জন্য বয়স ও দক্ষতা অনুযায়ী পাঠ্য বই নির্বাচন করা । ii. লেখা ভাষার সাথে সংযোগ স্থাপন করে শুদ্ধ উচ্চারণ ও স্বর প্রেক্ষপনের মাধ্যমে অনুশীলন করা । iii. শব্দ ভান্ডার বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হয়ে প্রায়োগিক ক্ষমতার উত্তরণ ঘটিয়ে অনুশীলন করা । iv. আবশ্যিক পাঠ্য পুস্তকের বাইরে বয়সোপযোগী বিভিন্ন ধরনের পুস্তক, সংবাদপত্র, বিদ্যলয়ের দেওয়াল পত্র ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ ইত্যাদি ।
35. লেখা কি ?
উঃ মানুষের মনের ভাব নির্দিষ্ট কিছু লিপির মাধ্যমে অন্যের কাছে বোধগম্যভাবে উপস্থাপন করার কৌশলকে বলা হয় লেখা । ভাষা প্রকাশের দুটি রুপ যথাঃ মৌখিক এবং লিখিত । লেখার মাধ্যমে আমরা দূরে থেকেও অন্য কোন মানুষের মধ্যে আমাদের চিন্তাধারা, আমাদের অব্যক্ত কথা তুলে ধরতে পারি ।
36. লিখন প্রক্রিয়া কয় প্রকারের হয়ে থাকে ?
উঃ লিখন প্রক্রিয়া মূলতঃ ছয় প্রকার, যথাঃ i. Logographic, ii. Syllabic, iii. Alphabetic, iv. Featural, Ideographic এবং Pictographic লিখন প্রক্রিয়া ।
37. কোন সময় কোথায় প্রথম লেখার কৌশল আরম্ভ হয় ?
উঃ ব্রোঞ্জ যুগের প্রারম্ভে সুমের ও ইজিপ্ট সভ্যতায় প্রাচীন লেখার কৌশলের প্রমাণ পওয়া গেছে । এগুলি 3400-3200 খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের ।
38. লিখন দক্ষতার বিকাশে প্রভাববিস্তারকারী প্রাথমিক বিষয়গুলো কিকি ?
উঃ লিখন দক্ষতার বিকাশে প্রভাববিস্তারকারী প্রাথমিক বিষয়গুলো হল :- শিশুর মানো-শারীরিক ক্ষমতা ও সক্ষমতা, ii. বর্ণের সঠিক রূপের পরিচিতি ও সুস্পষ্টতা এবং iii. শিখন ও লেখন দ্রুতির সমন্বয় সাধন ইত্যাদি ।
39. লেখার দক্ষতা অর্জনের কৌশলগুলি কিকি ?
উঃ লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে, যথাঃ i. প্রথম অবস্থা থেকেই রেখা বিন্যাসের সমানুপাত বজায় রেখে হাতের পেশি ও আঙুলের সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করা । ii. মনোযোগ ও একাগ্রতা সহকারে নিয়মিত লেখা অভ্যাস করা এবং পূর্বের অপেক্ষা ভাল করার প্রচেষ্টা করা । iii. বর্ণবিন্যাসের ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করে তা সংশোধন করে পুনরায় লেখা । iv. প্রতিদিন নিয়মকরে সকালের দিকে যতো বেশি সম্ভব লেখা যায় তার চেষ্টা করা ইত্যাদি ।
40. আদর্শ লেখার মূল বৈশিষ্টগুলি কিকি ?
উঃ আদর্শ লেখার মূল বৈশিষ্টগুলি হলঃ লেখার সুস্পষ্টতা, নির্ভুলভাবে উপস্থাপন করা, সঠিক বানাননীতি অবলম্বন করা, স্বচ্ছন্দ পঠণের উপযোগী করে লেখা, শুদ্ধ বাক্য গঠন, সহজ গতিছন্দে যথার্থ অনুচ্ছেদ লেখা ইত্যাদি ।
41. ভাষার কয়টি উপাদান রয়েছে ?
উঃ ভাষাতত্ববিদদের মতে ভাষার চারটি উপাদান রয়েছে যথাঃ i. ধ্বনি (Phonology), ii. বাক্যবিন্যাস (Syntax), iii. শব্দের অর্থ (Semantics) এবং iv. প্রয়োগ (Pragmatics) ইত্যাদি ।
42. ধ্বনি (Phonology) বলতে কি বোঝায় ?
উঃ সংক্ষেপে Phonology বলতে বোঝায় শব্দ গঠনে ধ্বনির ব্যবহার । প্রত্যেক ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট হল মৌলিক ও স্বতন্ত্র ধ্বনি । শব্দের গঠনে ভাষার ক্ষুদ্রতম একক হল ধ্বনি ।
43. বাক্যবিন্যাস (Syntax) বলতে কি বোঝায় ?
উঃ বাক্য উপস্থাপনের সময় ব্যকরণগত বৈশিষ্ট বজায় রেখে বিভিন্ন ধ্বনির পারস্পরিক সঠিক সজ্জার ক্রমকে বাক্যবিন্যাস বলা হয় ।
44. শব্দের অর্থ (Semantics) বলতে কি বোঝায় ?
উঃ কোন শব্দের মাধ্যমে যা বোঝানো হয় তাকেই শব্দের অর্থ বলে ।
45. প্রয়োগ (Pragmatics) বলতে কি বোঝায় ?
উঃ পরিবেশ বা পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযুক্ত শব্দচয়ন ও স্বরক্ষেপনের মাধ্যমে ভাষাকে মৌখিক বা লিখিতভাবে উপস্থাপনের প্রক্রিয়াকে প্রয়োগ বলে ।
46. “শিশুরা হল শূন্য পাত্র যাদের মধ্যে ভাষা ভরে দিতে হয়”– উক্তিটি কার ?
উঃ স্কিনারের ।
47. শিখন তত্বে মডেল আচরণের ধারণা কে বা কারা প্রবর্তন করেন ?
উঃ বান্দুরা এবং ওয়াল্টার্স 1963 সালে শিখন তত্বে মডেল আচরণের ধারণা প্রবর্তন করেন ।
48. বান্দুরা এবং ওয়াল্টার্স এর সামাজিক শিখন তত্ব অনুযায়ী ভাষার বিকাশের উপায়টি কিরূপ ?
উঃ বান্দুরা এবং ওয়াল্টার্স এর সামাজিক শিখন তত্ব অনুযায়ী শিশু তার পরিবার ও পিতামাতার সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ও কথোপকথনের মাধ্যমে শব্দ ভান্ডার আয়ত্ব করে বাক্যবিন্যাস শিখে ভাষার উপস্থাপন করে । তাদের পরীক্ষা অনুযায়ী শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা পিতামাতার সন্তানদের ক্ষেত্রে ভাষার বিকাশ দ্রুত ও স্পষ্ট হয় ।
49. ভাষা শিক্ষায় শেপিং কি ?
উঃ শিশু ভাষা শিক্ষার সময় প্রারম্ভিক স্তরে সঠিক শব্দ উচ্চারণ না করে এলোমেলোভাবে উচ্চারণ করে ফলে তাদের কথা অনেক সময় বড়োরা বুঝে উঠতে পারে না । এই অসুবিধা দুর করার জন্য শিশু বারংবার প্রচেষ্টার মাধ্যমে একসময় সঠিক শব্দ উচ্চারণ করতে পারে এবং তাদের মনের ভাব বোঝাতে পারে । এভাবে ধীরেধীরে শিশু ক্রমশঃ জটিল শব্দ ও বাক্য বলতে সক্ষম হয় । এই সামগ্রিক পদ্ধতিটিকে স্কিনার শেপিং বলে উল্লেখ করেন ।
50. “ভাষা শিক্ষা জৈবিক ব্যপার” বলে কে অভিমত পোষণ করেন ?
উঃ আমেরিকান ভাষাবিদ চমোস্কি (Avram Noam Chomsky) এরুপ অভিমত পোষণ করেন ।
**********