Development of Soil Profile
Development of Soil Profile
পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের Physical Geography এর Unit-II এর Geomorphic Process অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত টপিক Development of Soil Profile সম্পর্কিত প্রথম অংশ । সমগ্র অধ্যায়টি বেশ কয়েকটি পর্বে শেষ হবে, তাই পরবর্তী পর্বটি পড়ার জন্য Next Part এ ক্লিক করো । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦
মৃত্তিকা পরিলেখের বিকাশ
☛ মৃত্তিকার পরিলেখ (Soil Profile) : অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশে সৃষ্ট পরিণত বা আদর্শ মাটির পৃষ্ঠ দেশ থেকে নীচে মূল বা আদি শিলা পর্যন্ত লম্বচ্ছেদ করলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কয়েকটি স্তর গড়ে ওঠার চিত্র ধরাপড়ে, এই স্তরগুলিকে একত্রে মৃত্তিকা পরিলেখ বলা হয় । Soil Science Society of America (SSSA) দ্বারা 1978 সালে প্রদত্ত সংজ্ঞায় মৃত্তিকা পরিলেখ সম্পর্কে বলা হয়েছে “The soil profile is defined as a vertical section of the soil, through all its horizons, and extending into the parent material.” প্রখ্যাত রাশিয়ান মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ভি.ভি.ডকুচায়েভ এর ধারণা থেকে Soil Profile এর কথা জানা যায় । মৃত্তিকা বিজ্ঞানে সাধরণভাবে 3-5 ফুট গভীরতায় মৃত্তিকা পরিলেখ সমন্ধে অধ্যায়ন করা হয় । একটি পরিণত মৃত্তিকার আদর্শ স্তরায়নে A, B, C এই তিনটি স্তর বিদ্যমান, আবার সমস্ত মাটিতে পরিলেখের সমস্ত স্তর দেখা নাও যেতে পারে ।
☛ মৃত্তিকা স্তর (Horizon) : মৃত্তিকা পরিলেখ লক্ষ্য করলে দেখা যায় পৃষ্ঠাদেশ থেকে নিম্নে জনক শিলা পর্যন্ত অংশে ভিন্ন প্রকৃতির ও বৈশিষ্ট্য যুক্ত একা একটি মৃত্তিকা ধাপ দেখতে পাওয়া যায়, এই ধাপগুলির একেকটিকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা মৃত্তিকা স্তর (Horizon) নামে অভিহিত করেন । অর্থাৎ এক কথায় মৃত্তিকা স্তর হল মৃত্তিকা পরিলেখ গঠনের প্রথমিক প্রধান উপাদান । রাশিয়ান মৃত্তিকাবিজ্ঞানী ডকুচায়েভ মৃত্তিকা পরিলেখে চার ধরনের স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন, যথাঃ A স্তর (A Horizon), B স্তর (B Horizon), C স্তর (C Horizon) ও D স্তর (D Horizon) । প্রসঙ্গতঃ সমস্ত মৃত্তিকার পরিলেখে একই ধরনের স্তর দেখা যায় না ।
তিনি, A স্তর (A Horizon) বলতে বিয়োজিত ও অবিয়োজিত জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ স্তর; B স্তর (B Horizon) বলতে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ ওপরের স্তর ও নিম্নের আবহবিকারগ্রস্ত জনক শিলার মধ্যবর্তী স্তর; C স্তর (C Horizon) বলতে আবহবিকারগ্রস্ত ক্রমশ মাটি প্রস্তুতকারক জনক শিলা; এবং D স্তর (D Horizon) বলতে কিছু ফাটল থাকলেও আবহবিকার দ্বারা পরিবর্তিত হয়নি এমন স্তরকে বুঝিয়েছেন ।
☛ প্রমুখ স্তর (Master Horizon) : মৃত্তিকা বিজ্ঞানীগণ বিভিন্ন মৃত্তিকার পরিলেখ উপস্থাপনের জন্য বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন । ঐ স্তরগুলির মধ্যে বিভিন্ন মাটিতে বিভিন্ন স্তর উপস্থিত থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে । কিন্তু এমন কিছু স্তর রয়েছে যেগুলি প্রায় সমস্ত মৃত্তিকার পরিলেখে দেখা যায় । অধিকাংশ মৃত্তিকার পরিলেখে অবস্থিত সাধারণ স্তরগুলিকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানীগণ প্রমুখ স্তর (Master Horizon) বলে অভিহিত করেন ।
অধিকাংশ মৃত্তিকা বা আদর্শ মৃত্তিকাতে A, B, C এই তিনটি স্তর দেখা যায় বলে এই তিনটি স্তরকে প্রমুখ স্তর বলা হয় । এছাড়া O এবং E নামক আরো দুটি স্তরকে প্রমুখ স্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয় ।
মৃত্তিকা বিজ্ঞানীগণ প্রমুখ স্তর হিসাবে প্রথমিক পর্যায়ে A, B, C এই তিনটি স্তরকে এবং O ও E নামক আরো দুটি স্তরকে প্রমুখ স্তর হিসাবে উল্লেখ করেন । এক্ষেত্রে O স্তর বলতে বোঝায় Organic Horizon কে; A স্তর বলতে বোঝায় Surface Horizon কে; B স্তর বলতে বোঝায় Subsoil Horizon কে; C স্তর বলতে বোঝায় Substratum Horizon কে এবং E স্তর বলতে বোঝায় Subsurface Horizon কে ।
☛ আদর্শ মৃত্তিকা পরিলেখের স্তর : একটি আদর্শ মৃত্তিকার পরিলেখকে প্রধান O, A, B, C এবং R এই পাঁচটি স্তরে (Horizon) এবং প্রধান স্তরগুলিকে আবার কয়েকটি উপ স্তরে (Layer) ভাগ করা যায় । তবে এক্ষেত্রে বিজ্ঞানী মহলে দ্বিমত রয়েছে । কারণ C স্তরের আবহবিকারগ্রস্ত জনক পদার্থ মাটি নয় এবং R স্তরের জনক শিলা যথেষ্ট পরিমাণে আবহবিকারগ্রস্ত হয় না । যাইহোক প্রধান স্তর এবং তাদের উপ স্তরগুলি হল – O স্তরের উপ স্তরগুলি হলঃ O1/AOO Layer ও O2/AO Layer, A স্তরের উপ স্তরগুলি হলঃ : A1 Layer, A2 Layer ও A3 Layer; B স্তরের উপ স্তরগুলি হলঃ : B স্তরের উপ স্তরগুলি হলঃ B1 Layer, B2 Layer ও B3 Layer; C স্তরের উপ স্তরগুলি হলঃ : C1 Layer, C2 Layer এবং R স্তরের উপ স্তর নেই ।
➦ O স্তর (Horizon) : মৃত্তিকা পরিলেখের সর্বোচ্চ স্তর হল O স্তর । এই স্তর A স্তরের ঠিক উপরে অবস্থান করে এবং জৈব পদার্থ দ্বারা সমৃদ্ধ । মূলতঃ অরণ্য বা উদ্ভিদ সমৃদ্ধ অঞ্চলে উদ্ভিদের জৈবাংশ পঁচে এবং প্রাণীজাত আবর্জনা দ্বারা এই স্তর গঠিত হয় বলে মূল মৃত্তিকার সাথে এই স্তরের সম্পর্ক থাকে না, তাই অনেক মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এই স্তরকে মৃত্তিকা স্তর বলে ধরেন না । এই স্তরে অণুজীবের প্রধান্য দেখা যায় এবং বিয়োজিত ও অর্ধবিয়োজিত জৈব পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । এই স্তরকে আবার O1/AOO Layer ও O2/AO Layer এ বিভক্ত করা হয় । বর্তমানে যেকোনো মৃত্তিকায় জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ স্তরকে O স্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয় ।
➦ O স্তরের উপস্তর : মৃত্তিকা পরিলেখের O স্তর দুটি উপস্তর নিয়ে গঠিত হয়, যথাঃ i. সদ্য সংযোজিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর অবিয়োজিত বা অর্ধবিয়োজিত দেহাংশ দ্বারা বিকশিত স্তর বা আবর্জনা স্তর (Litter Layer) বা O1/AOO Layer । বনাঞ্চলে এই উপ স্তরকে F স্তর বলা হয় । এর গভীরতা মাত্র 1-2 ইঞ্চি হয় । ii. অণুজীব দ্বারা হিউমিফিকেশন ও খনিজিকরণ প্রক্রিয়া যুক্ত অর্ধবিয়োজিত বা বিয়োজিত পদার্থ দ্বারা গঠিত স্তর বা O2/AO Layer । এই স্তর বনাঞ্চলে H স্তর, সরলবর্গীয় অরন্যাঞ্চলে ডাফ (Duff) এবং শক্ত কাঠের পর্নমোচী অরন্যাঞ্চলে মাল (Mull) নামে অভিহিত হয় । O2 স্তরের রঙ হয়ে থাকে গাড় বাদামি প্রকৃতির ।
একাদশ শ্রেণীর দুটি সেমিস্টারের In Details আলোচনা রয়েছে ইবুক দুটিতে 📥
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
➦ A স্তর (Horizon) : মৃত্তিকা পরিলেখের সর্ব প্রথম আদর্শ স্তর হল ‘A’ স্তর । স্তরটি হিউমাস সমৃদ্ধ একটি খনিজ স্তর । অনুস্রবনের মাধ্যমে দ্রাব্য লবণ, কর্দম, লৌহ, অ্যালুমিনিয়াম এই স্তর থেকে নিম্নে অপসৃত হওয়ায় একে ধৌত স্তর (Eluvial Horizon) ও বলা হয় l এই স্তরটি সব ধরনের মাটির পরিলেখে উপস্থিত থাকে এবং সিলিকা ও হিউমাস সমৃদ্ধ একটি স্তর । এই স্তর মূলতঃ পৃষ্ঠ স্তর (Topsoil) নামে পরিচিত এবং এর গড় গভীরতা 8-10 সেমিঃ পর্যন্ত হয় । তবে ক্ষেত্র বিশেষে গভীরতার হেরফের ঘটে, যেমনঃ শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে স্তরটি 15-20 সেমিঃ এবং মরুপ্রায় ও তৃণভূমিতে 60-75 সেমিঃ পর্যন্ত পুরু হয় । এই স্তরকে Root Zone ও বলা হয় । এই স্তরকে তিনটি উপ স্তরে ভাগ করা যায়, যথা – A1 Layer, A2 Layer ও A3 Layer ।
➦ A1 Layer : কালো বর্ণের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ পুরু খনিজ-মৃত্তিকার স্তর হল A1 Layer । এটি A স্তরের প্রথম উপস্তর । স্তরটি হিউমিক স্তর নামেও অভিহিত । জৈব ও ধাতব পদার্থের সমন্বয়ে স্তরটি গঠিত এবং এর রঙ গাঢ় কালো । পডজল মাটিতে এই স্তরের গভীরতা কম কিন্তু চার্ণোজেম মাটিতে অধিক । স্তরটির গভীরতা 7-10 সেমিঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে । ধৌতিকরণের ফলে এই স্তরের গভীরতা অনেকসময় কমে গিয়ে নিম্নবর্তী A2 উপস্তরের উপর চলে আসে ।
➦ A2 Layer : মৃত্তিকা পরিলেখের A স্তরের দ্বিতীয় উপস্তর হল A2 উপস্তর । A1 স্তরের নীচে অবস্থিত সম্পূর্ণ ভাবে খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ, বড় দানার বালুকার প্রধান্য যুক্ত এবং সামান্য জৈব পদার্থ যুক্ত হালকা বর্ণের স্তর হল এই স্তর । পডজল মাটিতে এই স্তর লক্ষ্যনীয় । অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে খনিজ ও জৈব পদার্থ গুলি এই স্তর থেকে নিম্ন স্তরে দ্রুত অপসারিত হয় ফলে এই স্তরে কোয়ার্টাজ বালুকণার উপস্থিতি অধিক থাকে । স্তরটি স্বছিদ্র যুক্তগঠনহীন এবং 10-20 সেমিঃ পর্যন্ত পুরু হয় । এই স্তরকেই যথার্থ A স্তর ধরা হয় ।
A2 উপস্তরটি মূলতঃ ধৌতিকরণ প্রক্রিয়ার প্রধান্য যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে এই স্তরকে E (Eluvio) স্তর নামে অভিহিত করা হয় । ফ্রান্সে A2 উপস্তরটিকে আরো দুটি নামে অভিহিত করা হয় । যেমনঃ A2 উপস্তরে লৌহ অক্সাইড দানা অনুপস্থিত থাকলে তখন তাকে A2l স্তর এবং লৌহ অক্সাইড দানা উপস্থিত থাকলে A2lf স্তর নামে অভিহিত করা হয় ।
☛ PSC Geography Study Materials
➦ A3 Layer : মৃত্তিকা পরিলেখের A স্তরের দ্বিতীয় উপস্তর হল A3 Layer । A স্তরের A2 ও B স্তর এর মাঝে অবস্থিত, A স্তরের বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ কিন্ত B স্তর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্য যুক্ত স্তর হল A3 Layer । সব মাটিতে এই উপস্তর দেখা যায় না ।