Soil Erosion, Conservation & Management
Soil Erosion, Conservation & Management
পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের Physical Geography এর Unit-II এর Geomorphic Process অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত টপিক Soil Erosion, Conservation & Management সম্পর্কিত প্রথম অংশ । সমগ্র অধ্যায়টি বেশ কয়েকটি পর্বে শেষ হবে, তাই পরবর্তী পর্বটি পড়ার জন্য Next Part এ ক্লিক করো । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦
মৃত্তিকা ক্ষয়, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা
☛ মৃত্তিকা ক্ষয় (Soil Erosion) : বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিধারা, স্রোত প্রবাহ, তরঙ্গ ঘাত প্রভৃতির ফলে অরক্ষিত ভূমির উপরিভাগের অতি প্রয়োজনীয় নরম স্তরের অতিমাত্রায় অপসারণ; অথবা বিভিন্ন দূষক পদার্থের দ্বারা মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাসকে মাটি ক্ষয় বলা হয় । অন্যভাবে বলা যায়, ধাবমান জলধারা, বায়ুপ্রবাহ এবং অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক ক্ষয়কারী শক্তির প্রভাবে মৃত্তিকা পৃষ্ঠের উত্তরোত্তর নগ্নীভবনকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে । নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে বছরে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ প্রতি হেক্টর জমিতে 0-20 টন এবং ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে বছরে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ প্রতি হেক্টর জমিতে 50-100 টন ।
তথ্য : 450 মিলিয়ন বছর আগে জল ও বায়ু দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় শুরু হয় বলে ইংরেজ ভূমিরূপবিদ মর্টলোক (Dr.David T. Favis-Mortlock) 2017 সালে অভিমত পোষণ করেন । বৈশ্বিক মৃত্তিকা ক্ষয়ের বার্ষিক গড় পরিমাণ প্রতি হেক্টরে 16টন । এর ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় । বিশ্বব্যাপী চাষযোগ্য জমির 1/3 জমি মাটি ক্ষয়ের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে (FAO) । বিশ্বব্যাপী মাটির ক্ষয়ের 70% কৃষি (IPCC) দ্বারা সৃষ্ট । মাটি ক্ষয়ের কারণে বার্ষিক 400 বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি (FAO) হয় । মাটি ক্ষয়ের কারণে ভারতে 147 মিলিয়ন হেক্টর জমি প্রভাবিত হয় (পরিবেশ মন্ত্রণালয়) । মাটি ক্ষয়ের কারণে ভারতীয় কৃষি জমির 30% জমি অবক্ষযয়ের কবলে রয়েছে (ICAR)। মাটি ক্ষয়ের কারণে ₹1,105 বিলিয়ন বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি (কৃষি মন্ত্রণালয়) হয়।
মৃত্তিকা ক্ষয় সম্পর্কে 1912 সালে A.W Sampson দ্বারা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গবেষণা আরম্ভ হয় । 1917 সালে M.F Miller এর তত্বাবধানে কলম্বিয়ার Missouri Agricultural Experiment Station এ মৃত্তিকা ক্ষয় সম্পর্কে Field Erosion Plot Research আরম্ভ হয় ।
মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ : আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক মরিসাওয়া (Marie Morisawa) 1968 সালে ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মাটি ক্ষয়ের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন; যথাঃ জলবায়ু এবং ভূতাত্বিক গঠন । ভূমি ক্ষয়ের উপাদানের পরিমার্জিত সমীকরণটি হল : E = f(R,K,L,S,C,P); যেখানে R = বৃষ্টিপাতের পরিমাণের বন্টন, K = মাটির ভৌত ও রসায়নিক ধর্ম, L = ঢালের দৈর্ঘ, S = ঢালের পরিমাণ, C = শষ্য চাষ সংক্রান্ত তথ্য এবং P = সংরক্ষণ সংক্রান্ত রাশি ।
Global Assessment of Human Soil Degradation (GLASOD) 1992 সালে প্রথম বিশ্বব্যপী মৃত্তিকা অবনমনের মানচিত্র প্রস্তুত করে, যার স্কেল ছিল 1:10 মিলিয়ন ।
স্বাভাবিকভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান কারণগুলি হলঃ ভারী বৃষ্টিপাত, কৃষি জমির জল নির্গমন, অরণ্য হ্রাস, অত্যধিক গোচারণ, নির্মাণ কার্যক্রম, ভূমিধস, উপকূলীয় ক্ষয় ইত্যাদি । নিম্নে এগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ
i. ভারী বৃষ্টিপাত : ভারী বৃষ্টিপাত মৃত্তিকা ক্ষয়ের একটি প্রধান কারণ । নিবিড় বৃষ্টিপাত মাটির অনুপ্রবেশ ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায় ফলে ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় হয় । খাড়া ঢাল যুক্ত ভূপৃষ্ঠ, দুর্ভেদ্য মাটির উপস্থিতি এবং উদ্ভিদের অভাব এই ক্ষয় প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে ।
তথ্য : FAO এর তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক স্তরে জলের ক্ষয়কার্যের দ্বারা বিশ্বব্যাপী মাটি ক্ষয়ের 70% হয়। বিশ্বে জল দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয়ের গড় পরিমাণ 20 থেকে 30 গিগাটন প্রতি বছর । আবার ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ভারতে 45% মাটি ক্ষয় হয় (জাতীয় মৃত্তিকা সংরক্ষণ কর্মসূচি)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, 2018 সালে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কেরালায় বন্যার সাথে সাথে মাটির মারাত্মক ক্ষয়, ভূমিধস এবং অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে৷
একাদশ শ্রেণীর দুটি সেমিস্টারের In Details আলোচনা রয়েছে ইবুক দুটিতে 📥
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
ii. কৃষি জমির জল নির্গমন : কৃষি জমির জল নির্গমন মৃত্তিকা ক্ষয়কে তরান্বিত করে । কৃষি ক্ষেত্রের জলে উপরিস্তরের আলগা মাটি, জৈব দেহাবশেষ ইত্যাদি দ্রবীভুত অবস্থায় স্থানান্তরিত করে মৃত্তিকা ক্ষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন এবং অনির্দিষ্ট জল ব্যবস্থাপনা মৃত্তিকা ক্ষয় প্রবণতাকে বৃদ্ধি করে ।
তথ্য : বিশ্ব্ জুড়ে শস্য ক্ষেত্রে (Tillage Erosion) প্রতি বছর মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ 30 টন প্রতি হেক্টর জমিতে । বিশ্বব্যাপী মোট কৃষি জমির 30% মাটি ক্ষয় (FAO) দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভারতে (কৃষি মন্ত্রক) 25% মাটির ক্ষয় কৃষিকাজের কারণে হয়।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পাঞ্জাবে নিবিড় চাষ এবং অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন মৃত্তিকা ক্ষয় এবং জল দূষণের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ।
iii. অরণ্য হ্রাস : অরণ্য হ্রাস মৃত্তিকা ক্ষয়ে গুরুত্বপূর্ণ । উদ্ভিদের আবরণ মাটিকে আঁকড়ে থাকে এই আবরণ অপসারিত হলে মাটির সুরক্ষা হ্রাস পায় এবং মাটি আলগা হয়ে ক্ষয়ের কবলে পড়ে ।
তথ্য : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী 15% বন উজাড় করা হয়েছে (IPCC) । ফলে বিশ্বব্যাপী মৃত্তিকা ক্ষয়ও তরান্বিত হয়েছে । 1990 সাল থেকে ভারতের 25% বনভূমি হারিয়ে গেছে (ভারতের বন জরিপ)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আমাজন রেইনফরেস্ট অঞ্চলে অরণ্য হ্রাসের ফলে মাটির ক্ষয় হয়, জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয় এবং জলবায়ু পরিবর্তন হয়।
iv. অতিরিক্ত গোচারণ : অতিরিক্ত গবাদি পশুর বিচরণ গাছপালার ক্ষতি করে, মাটির ঘাসের আবরণ হ্রাস করে, গবাদিপশুর পায়ের খুরের আঘাতে মাটি আলগা হয়ে পড়ে ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় তরান্বিত হয় ।
তথ্য : অত্যধিক পশু চারণ বিশ্বব্যাপী চারণভূমির (FAO) 20%কে প্রভাবিত করে৷ অত্যধিক চারণ ভারতে 15% মাটির ক্ষয় ঘটায় (জাতীয় মৃত্তিকা সংরক্ষণ কর্মসূচি)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রাজস্থানে অত্যধিক হারে চারণ মাটির ক্ষয়, গাছপালা হ্রাস এবং মরুকরণের জন্য দায়ী ।
v. নির্মাণ কার্যক্রম : নির্মাণ কার্যের জন্য মাটির খনন, অরণ্য হ্রাস, মাটিতে বর্জ্য সংযুক্তি ইত্যাদি প্রভাবে মাটি যেমন ক্ষয় হয় তেমনি দূষিতও হয় ।
তথ্য : বৈশ্বিক মাটির ক্ষয়ের 10% নির্মাণ কার্যক্রম (FAO) দ্বারা সৃষ্ট হয়। নির্মাণ কার্যক্রম ভারতে 5% মাটি ক্ষয়ের কারণ (পরিবেশ মন্ত্রক)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, মুম্বাইতে উপকূলীয় নির্মাণ মাটির ক্ষয়, বাসস্থান ধ্বংস এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
vi. ভূমিধস : ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিকম্প বা মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে পার্বত্যাঞ্চলে ভূমিধ্বস মৃত্তিকা ক্ষয়ের স্থানীয় কারণ ।
তথ্য : ভূমিধস বিশ্বব্যাপী 10% মাটি ক্ষয়ের (FAO) কারণ। ভূমিধসের কারণে ভারতেও 5% মাটি ক্ষয় হয় (জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, 2014 সালের লাদাখ ভূমিধসের প্রভাবে প্রচুর মাটি স্বস্থান থেকে অন্যত্র পরিবাহীত হয় ।
vii. উপকূলীয় ক্ষয় : সমুদ্রের তরঙ্গের ক্রিয়া, জোয়ার এবং সামুদ্রিক স্রোত উপকূলরেখার মাটিকে ক্ষয় করে মৃত্তিকা ক্ষয়ে অংশ নেয় ।
তথ্য : উপকূলীয় ক্ষয় বিশ্বব্যাপী 20% উপকূলরেখার উপর প্রভাব বিস্তার করে (UNEP)। উপকূলীয় ক্ষয় ভারতের উপকূলরেখার 25% অঞ্চলকে প্রভাবিত করে (পরিবেশ মন্ত্রক)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, উপকূলীয় তামিলনাড়ু রাজ্যের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়ের উত্থান, এবং মানুষের কার্যকলাপ উপকূলীয় ক্ষয়কে বাড়িয়ে তোলে।
viii. বায়ুর ক্ষয়জাত কার্য : শুষ্ক অঞ্চলে, উদ্ভিদ বিহীন অঞ্চলে এবং আলগা মাটিযুক্ত অঞ্চলে বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক । এইসমস্ত অঞ্চলে শক্তিশালী বাতাস মাটির কণা পরিবহন করে মৃত্তিকা ক্ষয়ে অংশগ্রহণ করে ।
তথ্য : বায়ু ক্ষয় বিশ্বব্যাপী শুষ্ক অঞ্চলের (FAO) 15% অঞ্চলকে প্রভাবিত করে। বিশ্বের 340 মিলিয়ন হেক্টর বা 40% ভূমিভাগ বায়ু ক্ষয় দ্বারা প্রভাবিত । বিশ্বে বায়ু দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয়ের গড় পরিমাণ 2 গিগাটন প্রতি বছর । বায়ু ক্ষয় ভারতের শুষ্ক অঞ্চলের 10% অঞ্চলকে প্রভাবিত করে (পরিবেশ মন্ত্রক)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রাজস্থানে বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে মাটির ক্ষয়, তরান্বিত হয় ।
ix. নদী তীর ভাঙন : অতিরিক্ত জলের যোগান নদী তীরবর্তী অংশের মাটিকে আলগা করে উপড়ে নিয়ে পরিবাহীত করে মৃত্তিকা ক্ষয়ে অংশগ্রহণ করে ।
তথ্য : নদীর তীর ক্ষয় বিশ্বব্যাপী 10% নদীকে প্রভাবিত করে (FAO)। নদীর তীরের ক্ষয় ভারতের 15% নদীকে প্রভাবিত করে (জলসম্পদ মন্ত্রণালয়)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, গঙ্গা নদী ভারতে মাটি ক্ষয় স্থানান্তরিত করে ।