Soil Erosion Conservation & Management Part-II
Soil Erosion Conservation & Management Part-II
পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের Physical Geography এর Unit-II এর Geomorphic Process অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত টপিক Soil Erosion Conservation & Management সম্পর্কিত দ্বিতীয় অংশ । সমগ্র অধ্যায়টি বেশ কয়েকটি পর্বে শেষ হবে, তাই পরবর্তী পর্বটি পড়ার জন্য Next Part এ ক্লিক করো । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦
মৃত্তিকা ক্ষয়, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা [দ্বিতীয় অংশ]
মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রভাব : মাটি ক্ষয়ের যেসমস্ত প্রভাব জীবজগৎকে প্রভাবিত করে তার কয়েকটি হলঃ
i. উর্বর জমির ক্ষতি : মাটি ক্ষয় আবাদি জমি হ্রাস করে, খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে।
তথ্য : 1970 থেকে বিশ্বব্যাপী আবাদযোগ্য জমির 30% হারিয়ে গেছে (FAO)। মাটি ক্ষয়ের কারণে ভারতের 30% উর্বর জমি হারিয়ে গেছে (পরিবেশ মন্ত্রক)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, রাজস্থানের থর মরুভূমি, বাতাস ও জলের কারণে মাটির ক্ষয় উর্বর জমির ক্ষতি হয়েছে।
ii. কৃষি উৎপাদনশীলতা হ্রাস : মাটির ক্ষয় মাটির উর্বরতা হ্রাস করে, ফসলের ফলন কমিয়ে দেয়।
তথ্য : মাটি ক্ষয়ের কারণে বিশ্বব্যাপী ফসলের ফলন 10-15% হ্রাস পেয়েছে (FAO)। মাটির ক্ষয় ভারতে (ICAR) 20-30% ফসলের ফলন হ্রাস হয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পাঞ্জাবের গম বেল্টে নিবিড় চাষ এবং মাটির ক্ষয় ফসলের ফলন হ্রাস করেছে।
iii. জলাশয়ে বর্ধিত অবক্ষেপন : ক্ষয় জনিত মৃত্তিকা জল দ্বারা বাহিত হয়ে নিম্নভূমি অঞ্চলে থিতু হয় । এরূপ অবক্ষেপণ জলজ বাস্তুতন্ত্রের এবং জলের গুণমানের ক্ষতি করে।
তথ্য : বিশ্বব্যাপী জলপথের 20% অবক্ষেপণ দ্বারা প্রভাবিত হয় (UNEP)। ভারতের 40% জলপথ অবক্ষেপণ দ্বারা প্রভাবিত হয় (কেন্দ্রীয় জল কমিশন)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, গঙ্গা নদী, মাটি ক্ষয় করে তা নিম্নভূমিতে অবক্ষেপণ করে জলের গুণমানকে হ্রাস করেছে।
iv. বন্যা : মাটির ক্ষয় জলপ্রবাহ বৃদ্ধি করে, যার ফলে বন্যা হয়।
তথ্য : বিশ্বব্যাপী বন্যা 10 বিলিয়ন ডলার বার্ষিক ক্ষতির কারণ (UNDRR)। মাটির ক্ষয় ভারতে বন্যার ঝুঁকি বাড়ায়, বার্ষিক 30 মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করে (NDMA)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, 2018 সালে সংঘটিত কেরালার বন্যার কথা ।
v. ভূমিধস : মাটি ক্ষয় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়।
তথ্য : ভূমিধসের কারণে বিশ্বব্যাপি বার্ষিক 4,000-50,000 জন মারা যায় (UNDRR)। মাটির ক্ষয় ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে (GSI) ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, 2014 সালে লাদাখ ভূমিধস ব্যপক ধ্বংসলীলা চালায় ।
vi. জল দূষণ : পরিবাহীত মৃত্তিকা অন্য স্থানে অবক্ষেপিত হয়ে জলকে ঘোলা করে দূষিত করে তোলে।
তথ্য : বিশ্বব্যাপী জলপথের 40% দূষিত (WHO)। মাটি ক্ষয় (CPCB) এর কারণে আংশিকভাবে ভারতের 70% জলপথ দূষিত।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যমুনা নদী দ্বারা মাটির ক্ষয় দূষণ ছড়িয়ে জলের গুণমানকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে।
vii. জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি : মাটির ক্ষয় আবাসস্থল ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে।
তথ্য : বিশ্বব্যাপী 60% প্রজাতি বাসস্থান মৃত্তিকা ক্ষয় (IUCN) দ্বারা হুমকির সম্মুখীন। মাটির ক্ষয় ভারতের 20% জীববৈচিত্র্যের হটস্পটকে প্রভাবিত করে (MoEFCC)।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পশ্চিমঘাট পার্বত্যাঞ্চলের মাটি ক্ষয় জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
viii. জলবায়ু পরিবর্তন : মাটির ক্ষয় মাটিতে সঞ্চিত কার্বন নির্গত করে আবার গ্রীনহাউস গ্যাস নিঃসরণ 10-20% বৃদ্ধি করে (IPCC) ফলে জলবায়ু পরিবর্তন তরান্বিত হয়।
ix. অর্থনৈতিক ক্ষতি : মৃত্তিকা ক্ষয় বৈশ্বিক স্তরে বার্ষিক 400 বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির (FAO) জন্য দায়ী এবং 1.5 বিলিয়ন মানুষের জীবিকাকে প্রভাবিত করে (UNCCD) করে ।
মৃত্তিকা সংরক্ষণের উপায় : জার্মান কৃষি বিজ্ঞানী ওলনি (Martin Ewald Wollny) 1888 সালে মৃত্তিকা ও জল সংরক্ষণের সূচনা করেন । মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য বেসকিছু পন্থা অবলম্বন করা যায় । মৃত্তিকা সংরক্ষণে ব্যবহৃত পন্থাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়; যথাঃ A. জৈবিক পদ্ধতি (Biological Methods), B. যান্ত্রিক পদ্ধতি (Mechanical Methods) এবং C. অন্যান্য পদ্ধতি (Others Methods) । মৃত্তিকা সংরক্ষণে ব্যবহৃত জৈবিক পদ্ধতিগুলি মূল তিন ভাগে বিভক্ত যথাঃ a. কৃষি চর্চা (Agronomic Practices), b. শুষ্ক কৃষি (Dry Farming) এবং c. তৃণব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (Agrostological Methods) ।
একাদশ শ্রেণীর দুটি সেমিস্টারের In Details আলোচনা রয়েছে ইবুক দুটিতে 📥
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
কৃষি চর্চা চার প্রকারের হয়ে থাকে, যথাঃ i. সমউচ্চরেখা কৃষি (Contour Farming), ii. মালচিং (Mulching), iii. দীর্ঘ রৈখিক চাষ (Strip Cropping) এবং iv. মিশ্র কৃষি (Mixed Cropping) । মৃত্তিকা সংরক্ষণে ব্যবহৃত যান্ত্রিক পদ্ধতিগুলি সাত প্রকারের যথাঃ i. অববাহিকা তালিকা (Basin Listing) পদ্ধতি, ii. উপ-মৃত্তিকাকরণ (Sub-soiling) পদ্ধতি, iii. সমউচ্চরেখা বাঁধন (Contour bunding) পদ্ধতি, iv. অনুক্রম বাঁধন (Graded bunding), v. সারিবদ্ধ ধাপ (Bench Terracing) পদ্ধতি, vi. সমউচ্চরেখা খাত (Contour Trenching) পদ্ধতি ও vii. তৃণ জলপথ (Grassed Waterway) পদ্ধতি ইত্যাদি । এছাড়া মৃত্তিকা সংরক্ষণে ব্যবহৃত অন্যান্য পদ্ধতিগুলি হলঃ i. গালী ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ (Gully Erosion Control), ii. জলাধার সুস্থতা (Watershed Treatment), iii. প্রবাহখাত স্থিতিশীলতা (Streambank Stabilisation), iv. সামুদ্রিক উপকূল ও সৈকত ব্যবস্থাপনা ও v. ভূমি ধ্বস নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি । ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে যেসমস্ত পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলি হলঃ বনায়ন, পশুচারণ নিয়ন্ত্রন, বাঁধ নির্মাণ এবং পরিবর্তিত কৃষি পদ্ধতি ইত্যাদি । ভারতের পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক এই তিনটি রাজ্যে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে ভারত সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে
সাধরণভাবে মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য যেসমস্ত উপায় অবলম্বন করা যায় সেগুলি হলঃ
i. বনায়ন (Aforestation) : একাধারে মৃত্তিকা ক্ষয় হ্রাসে এবং জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে গাছ লাগানো হয়। বনায়ন মাটির ক্ষয় কমায়, জীববৈচিত্র্য বাড়ায় এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করে । তথ্য : বিশ্বব্যাপী 1.2 বিলিয়ন হেক্টর বন পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা (UNEP) রয়েছে । জাতীয় বনায়ন কর্মসূচি (NAP) ভারতে 2.5 বিলিয়ন গাছ রোপণ করেছে।
ii. কন্টুর ফার্মিং (Counter Farming) : মাটির ক্ষয় কমাতে ঢাল জুড়ে চাষ করা। এই পদ্ধতি মাটির ক্ষয় কমায়, ফসলের ফলন বাড়ায় এবং জলের গুণমান উন্নত করে । প্রাচীন গ্রিসে, ফিনিশিয়ানদের দ্বারা কন্টুর ফার্মিং এর সূচনা হয় ।
তথ্য : এই পদ্ধতিতে বিশ্বব্যাপী 30% মাটির ক্ষয় হ্রাস (FAO) সম্ভব হয়েছে । হিমাচল প্রদেশে কনট্যুর ফার্মিং মাটির ক্ষয় 30% কমিয়েছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নিলিগিরি পার্বত্যাঞ্চলে প্রতি হেক্টরে 15 ফুট মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ সম্ভব হয়েছে ।
iii. ধাপ চাষ (Terracing) : মাটির ক্ষয় কমাতে ঢালে সমতল প্লট তৈরি করা। মাটির ক্ষয় কমায়, ফসলের ফলন বাড়ায় এবং জলের গুণমান উন্নত করে । তথ্য : এই পদ্ধতি অবলম্বন করে বিশ্বব্যাপী 40% মাটির ক্ষয় হ্রাস (FAO) করা সম্ভব । উত্তরাখণ্ডে টেরেসিংয়ের ফলে মাটির ক্ষয় 40% কমেছে।
iv. শষ্যাবর্তন : মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ক্ষয় কমাতে এই পদ্ধতি কার্যকর। মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ক্ষয় কমায় এবং জীববৈচিত্র্য বাড়ায় । তথ্য : এই পদ্ধতি অবলম্বনে বিশ্বব্যাপী ফসলের ফলন 15% বৃদ্ধি (FAO) সম্ভব হয়েছে । পাঞ্জাবে ফসলের আবর্তন ফসলের ফলন 20% বৃদ্ধি করেছে।
v. জৈব চাষ : মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ক্ষয় কমাতে এই প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ক্ষয় কমায় এবং জীববৈচিত্র্য বাড়ায় । তথ্য : এই পদ্ধতি অবলম্বনে বিশ্বব্যাপী মাটির উর্বরতা 25% বৃদ্ধি (IFOAM) পায় । সিকিমে জৈব চাষের ফলে মাটির উর্বরতা 25% বৃদ্ধি পেয়েছে।
vi. মাটি সংরক্ষণ কাঠামো : মাটির ক্ষয় কমাতে বাঁধ সহ অন্যান্য কাঠামো নির্মাণ করা হয়। এই পদ্ধতি মাটির ক্ষয় কমায়, জলের প্রাপ্যতা বাড়ায় এবং কৃষির উন্নতি ঘটায় । তথ্য : এই পদ্ধতি অবলম্বনে বিশ্বব্যাপী মাটির ক্ষয় 50% হ্রাস (FAO) পায় । রাজস্থানে চেক ড্যাম মাটির ক্ষয় 50% কমিয়েছে।
vii. জল ব্যবস্থাপনা : জলাশয় স্তরে জল এবং মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবস্থাপনা। জলের গুণমান উন্নত করে, মাটির ক্ষয় কমায় এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ায় ।
তথ্য : বিশ্বব্যাপী জলের প্রাপ্যতা 30% বৃদ্ধি (GWP) করেছে । অন্ধ্রপ্রদেশে জলপ্রপাত ব্যবস্থাপনার ফলে জলের প্রাপ্যতা 30% বৃদ্ধি পেয়েছে৷
viii. দীর্ঘ রৈখিক চাষ (Strip Cropping) : এই পদ্ধতি মাটির ক্ষয় কমায় ও জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে । তথ্য : বিশ্বব্যাপী মাটির ক্ষয় 20% হ্রাস (FAO) । মহারাষ্ট্রে মাটির ক্ষয় 25% হ্রাস ।
ix. মালচিং (Mulching) : শস্য ক্ষেত্রে দুটি শস্য সারির মধ্যবর্তী স্থানের মাটিকে বিভিন্ন উপাদান দ্বারা আচ্ছাদিত করার পদ্ধতিকে বলে মালচিং । এই পদ্ধতি মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে, আগাছা দমন করে এবং মাটির ক্ষয় প্রতিরোধ করে । তথ্য : এই পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী মাটির আর্দ্রতা 30% বৃদ্ধি (FAO) করে । এই পদ্ধতি ব্যবহার করে রাজস্থানে মাটির আর্দ্রতা 25% বৃদ্ধি পেয়েছে ।
⟽ Previous Post : নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু
❁❁❁❁❁❁❁❁❁❁