Geography as a discipline
Geography as a discipline
পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : প্রথম সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর Physical Geography এর Unit-I এর Geography as a discipline অধ্যায় সম্পর্কে । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦
Geography as a discipline // শাস্ত্র হিসাবে ভূগোল

☛ প্রাককথন : ভূগোল এক গতিশীল বিজ্ঞান, যার অধ্যায়ন পৃথিবীর উৎপত্তির সাথে সাথেই মানবীয় চেতনার আলোকে শুরু হয়ে গিয়েছিল । ডঃ কুন্তলা লাহিড়ি দত্তের মতে “উন্মুক্ত প্রান্তরে রোদ-বৃষ্টি-জল-পশুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে,আদিম মানুষের ভেবে চিন্তে গুহায় আশ্রয় নেওয়া” থেকেই ভূগোলের বিকাশ আরম্ভ হয় । অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী মানুষ ও পরিবেশের অন্তঃসম্পর্কের উপজীব্য হল ভূগোল,যা পর্যবেক্ষণকে হাতিয়ার করে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে চলেছে । এই পর্যবেক্ষণ নীতির জন্যই ভূগোল ভাষা ও সাহিত্য, জীববিদ্যা, জড়বিদ্যা, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত, খগোলবিদ্যা, দর্শন প্রভৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত । অর্থাৎ উক্ত বিষয়গুলোর জ্ঞান অর্জনে ভূগোলের জ্ঞান অপরিহার্য তাই ভূগোলকে ‘বিজ্ঞানের জননী’ (Mother of all Science) বলা হয় ।
☛ ব্যুৎপত্তি : ইংরাজী “Geography” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এরাটস্থেনিস (Eratsthenes) । যার ব্যুৎপত্তি গত অর্থ ‘Geo’ = ‘Earth’ বা ‘পৃথিবী’ এবং ‘Graphy’ = ‘Description’ অর্থাৎ ‘বর্ণনা’ বা লেখা । অর্থাৎ এরাটস্থেনিস “Geography” বলতে কঠিন,তরল ও বায়বীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত ‘পৃথিবীর বর্ণনা’ কে বুঝিয়ে ছিলেন । “Geography”এর বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে ‘ভূগোল’ শব্দের ব্যবহার, যার ব্যুৎপত্তি গত অর্থ হল ‘ভূ’ = ‘পৃথিবী’ বা ‘মাটি এবং ‘গোল’ = ‘বৃত্তাকার’ অর্থাৎ ‘পৃথিবী বৃত্তাকার’ বা ‘বৃত্তাকার পৃথিবী’ যা পৃথিবীর আকার বা আকৃতি কে বোঝায় । অর্থাৎ “Geography” শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ সম্পূর্ণ পৃথক । কিন্তু অতি প্রাচীনকাল থেকে ‘ভূগোল’ শব্দের ব্যবহার হয়ে আসায় এবং বিকল্প বাংলা না প্রচলন হওয়ায় এরুপ বিভ্রান্তিকে মেনেই “Geography” = “ভূগোল” বলে পাঠ করতে হবে । “ নামে কী আসে যায় ……………….।”
☛ সংজ্ঞা : যেহেতু ভূগোল এক গতিশীল বা পরিবর্তনশীল বিজ্ঞান তাই এর সংজ্ঞাও সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়ে চলেছে । আবার ভূগোলের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় সমন্ধেও বিজ্ঞ মহলে যথেষ্ট মতানৈক্য রয়েছে ফলে বিভিন্ন ভূগোল বেত্তা বিভিন্ন সময়ে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ভূগোলকে সংজ্ঞায়িত করেছেন । এদের কয়েকটি হল –
① ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগের ফরাসী ভৌগলিক তথা সম্ভাবনা বাদের জনক পল ভিদাল দা লা ব্লাশ (Paul Vidal Da La Blache1845-1918) 1887 সালে ভূগোলের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন “ভূগোল মানুষের বিজ্ঞান নয় স্থানের বিজ্ঞান” ।
② জার্মান ভৌগলিক ভেরেনিয়াস (Bernhardus Varenius) এর মতে “Geography focuses attention on the surface of the earth where it examines such things as climate, surface features, water, forest, deserts, Minerals, animals and human inhabitants.”
③ মার্কিন যুক্তরাষ্টের ভূগোলবিদ কার্ল ও সায়ার 1932 সালে বলেন “ভূগোল কখনো মানুষের বিজ্ঞান ছিলনা, ইহা বিশেষকরে পৃথিবী পৃষ্ঠের বিজ্ঞান l”
④ মার্কিন ভূগোলবিদ রিচার্ড হার্টশোর্ণে 1959 সালে বলেন “ভূগোল হল ভূপৃষ্ঠের বৈচিত্র পূর্ণ বৈশিষ্ট্যের সঠিক সুবিন্যস্ত ও যুক্তিসঙ্গত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সরবরাহের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় l”
⑤ ব্রিটিশ ভূগোলবিদ স্ট্যাম্প (Laurence Dudley Stamp) 1966 সালে তার “Dictionary Of Geography” বলেন “ভূগোল হল মানুষের পরিস্থিতির বিজ্ঞান, ইহা ভূপৃষ্ঠ ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা দেয় এবং ভৌগলিক বিভিন্ন এলাকার সাথে তাদের সম্পর্ক আলোচনা করে l”
⑥ মার্কিন ভূগোলবিদ এডওয়ার্ড জে. টাফি 1968 খৃষ্টাব্দে ভূগোল প্রসঙ্গে বলেন “ভূগোল হল ক্ষেত্রিয় সংগঠনের পঠন, যা তাদের প্রক্রিয়া ও ধরন সমন্ধে আলোচনা দেয় l”
⑦ ব্রিটিশ ভূগোলবিদ পিটার হ্যাগেট 1972 খৃষ্টাব্দে বলেন “ভূগোল হল সেই বিজ্ঞান যা পৃথিবী পৃষ্ঠে গড়ে ওঠা মানবীয় পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক প্রণালী, বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষেত্রিয় প্রণালী,তাদের গঠণ এবং পারষ্পরিক মিথস্ক্রিয়া সমন্ধে আলোচনা করে l”
⑧ মার্কসবাদী ভূগোলবিদ পিট 1977 সালে ভূগোল প্রসঙ্গে বলেন “একটি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানের যে অংশ একদিকে সামাজিক প্রক্রিয়া ও অন্য দিকে স্থানিক প্রক্রিয়া গুলির অন্তঃসম্পর্ক সমন্ধে আলোচনা করে তাই ভূগোল l”
⑨ আমেরিকান ভূগোলবিদ প্রিস্টন জেমস (Preston Everett James) এর মতে –“Geography is …..the field of science that deal with the association of phenomena, that gives character to particular pleaes and with likeness and differences among places”
①⓪ মঙ্কহাউস তাঁর ‘ভূগোল অভিধান’ এ বলেছেন “মানুষের আবাস হিসেবে ভূপৃষ্ঠের স্থানিক পৃথকীকরণ সমীক্ষা করা নিয়ে গড়ে উঠেছে ভূগোল। ”
①① ভারতীয় ভূগোলবিদ সুদীপ্তা অধিকারী তার ‘Fundamental of Geographical Thought’ গ্রন্থে 2008 সালে ভূগোলের পরিচয় প্রসঙ্গে বলেন “ভূগোল হল মানুষের অপরিহার্য্য সৃষ্টি, এর সূচনা হয় মানুষের ভূপৃষ্ঠে জীবনধারণের উপযোগী সঠিক ও নির্দিষ্ট স্থানকে চিহ্নিতকরনের মধ্য দিয়ে । ”
উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার
☛ ভূগোল আলোচনার প্রস্তুতিক্ষেত্র : ভূগোল আলোচনার প্রস্তুতিক্ষেত্র সমন্ধে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, থ্যালেস অফ মিলেটাস, হেরোডোটাস, এরাটোস্থেনিস, অ্যারিস্টটল, স্ট্র্যাবো এবং টলেমি এর মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিসে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভূগোলের অধ্যয়ন আরম্ভ হয় । হোমারের লেখা “Iliad” ও “Odyssey” (9th century B. C.) থেকে মানব ও স্থানের বর্ণনার ভিত্তিতে আমরা প্রথম ভৌগোলিক কার্যাবলীর রসদ পাই । পঞ্চদশ ও সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়কালকে পশ্চিমি দুনিয়ার প্রেক্ষিতে ভূগোলের ‘আবিষ্কারের কাল‘ (Age of Discovery) এর সূচনা হয় । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতককে তাত্বিক ভূগোলের প্রারম্ভিক কাল ধরা হয় । এই সময়কালে ফ্লেমিস ভূগোলবেত্তা মার্কেটর (Gerardus Mercator) এর “World Map” (1538) এবং ডাচ ভূগোলবিদ ভ্যারেনিয়াস (Bernhardus Varenius) এর “Geographia Generalis” (1650) তাত্বিক ভূগোলের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ইমানুয়েল কান্ট ভূগোলের ধারণায় স্থানের এবং ইতিহাসে সময়ের অবস্থানকে চিহ্নিত করে ভূগোল গবেষণার আরোহী ও অবরোহী পদ্ধতির দার্শনিক দিকটিকে স্পষ্ট করেন । 1769 সালে জেমস কুক এর প্রথম প্রশান্ত মহাসাগর যাত্রার সময়কে আধুনিক ভূগোল উত্তরণ বিন্দু (Turning Point) বলা হয় । স্টুডার্ট এর মতে কুকের এই যাত্রা ইউরোপীয় অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে অস্ট্রেলিয়ান ল্যান্ডমাস এবং তার অনন্য উদ্ভিদ ও প্রাণিকুল বৈচিত্র সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রদান করে । পৃথিবীর প্রথম বিধিবদ্ধ ভূগোল বিভাগ চালু হয় Russian Academy of Science এর আওতায় 1758 সালে মস্কো স্টেট ইউনিভর্সিটিতে । আধুনিক যুগে তথা অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বস্তুবাদী বিশ্লেষণের দ্বারা ভূগোলের পঠন-পাঠন পেশাদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয় । হুমবোল্ড (Alexander von Humboldt) এবং রিটার (Karl Ritter) এর কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আধুনিক ভূগোলের যাত্রাপথ আরম্ভ হয় । জার্মান ভৌগোলিক জুনে (Johann August Zeune : 1778-1853) এর নেতৃত্বে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঊনবিংশ শতকের প্রথম দশকে আধুনিক শাস্ত্রীয় ভূগোলের সূচনা হয় । 1808 সালে তিনি পাঠ্যবই হিসাবে জার্মান ভাষায় তার “গিয়া” (Gea: Versuch Die Erdrinde Sowohl Im Land- Als Seeboden Mit Bezug Auf Natur- Und Völkerleben Zu Schildern) নামক বই প্রকাশ করেন এবং 1809 সালে Geographical Association নামক ভৌগোলিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন । ঊনবিংশ শতকের শেষ এবং মধ্য-বিংশ শতক সময়কালে ভূগোল শাস্ত্রের আলোচনায় প্রণালীবদ্ধ বা প্রত্যক্ষবাদী দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর 1950-60 দশকে ভূগোল শাস্ত্রের প্রায় সমস্ত শাখায় বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের বিষয়কে সাধারণীকরণের জন্য ভূগোলে তত্ত্ব, প্রকল্প ও মডেল এর ব্যবহার সূচিত হয় ।
Pingback: MCQ Of XI Sem-I, Unit-I - নির্যাস.ইন
Pingback: MCQ Of Unit-I XI Sem-I - নির্যাস.ইন
Pingback: Scope and Content of Geography - নির্যাস.ইন