Concept of Isostasy
Concept of Isostasy
পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের Physical Geography এর Unit-I এর Geography as a discipline অধ্যায় এর Concept of Isostasy সম্পর্কে । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦
Concept of Isostasy // সমস্থিতির ধারণা
➣ দেখে নাও : একাদশ দ্বিতীয় সেমিস্টারের সমগ্র সিলেবাস
➲ প্রাককথন : পৃথিবীর ভূমিরূপ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ কোথাও সুউচ্চ আবার কোথাও বা সুগভীর, আবার কোথাও বা আপেক্ষিক সমতল প্রকৃতির । পৃথিবীর পৃষ্ঠের এরূপ গঠনের অন্যতম কারণ হল ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন গাঠনিক পদার্থের উপস্থিতি । পৃথিবীর শিলামণ্ডল মূলতঃ দুইটি স্তরে বিভক্ত, যথাঃ সিয়াল ও সিমা । সিয়াল স্তরের প্রধান উপাদান সিলিকন ও অ্যালুমিনিয়াম এবং সিমা স্তরের প্রধান উপাদান সিলিকন ও ম্যাগনেসিয়াম । উভয় ক্ষেত্রেই সিলিকন এর উপস্থিতি রইলেও পরিমাণের হেরফের লক্ষ্যণীয় । মহাদেশীয় শিলামণ্ডল বা সিয়াল 65% সিলিকা দ্বারা এবং মহাসাগরীয় শিলামণ্ডল বা সিমা 45% সিলিকা দ্বারা গঠিত । অন্যদিকে মহাদেশীয় শিলামণ্ডল বা সিয়াল 35% অ্যালুমিনিয়াম এবং মহাসাগরীয় শিলামণ্ডল বা সিমা 55% ম্যাগনেসিয়াম দ্বারা গঠিত । সিলিকার ঘনত্ব 2.2 থেকে 2.6 গ্রাম/ঘন সেমিঃ, আবার এর ভর 60.08 g/mol । অ্যালুমিনিয়ামের ঘনত্ব 2.4 থেকে 2.7 গ্রাম/ঘন সেমিঃ ও এর ভর 101.96 g/mol; যেখানে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘনত্ব 1.6 থেকে 1.7 গ্রাম/ঘন সেমিঃ ও ভর 24.305 g/mol । কিন্তু আনুষঙ্গিক উপাদানের উপস্থিতির ভিত্তিতে সিয়াল স্তরের গড় ঘনত্ব 2.7 গ্রাম/ঘন সেমিঃ এবং সিমা স্তরের গড় ঘনত্ব 3 গ্রাম/ঘন সেমিঃ, অর্থাৎ ঘনত্বের দিক থেকে সিয়াল স্তর অপেক্ষা সিমা স্তরের ঘনত্ব অধিক । অর্থাৎ সিয়াল স্তর অপেক্ষা সিমা স্তর অধিক ভারী ।
বর্তমানে আমরা জানি ভারী পদার্থের উপর মাধ্যাকর্ষণ টান অধিক হওয়ায় সেগুলি অধিক নিম্নগামী হয়ে থাকে, আবার হালকা পদার্থের উপর মাধ্যাকর্ষণ টান কম হওয়ায় সেগুলির নিম্নগামীতা কম । এক্ষেত্রে সিয়াল স্তর অপেক্ষা সিমা স্তরের পদার্থের ভার বেশি হওয়ায় সিমা স্তরটি সিয়াল স্তরের নীচে অবস্থান করে । অর্থাৎ হালকা পদার্থ দ্বারা গঠিত ভূমিভাগ সুউচ্চ প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং ভারী পদার্থ দ্বারা গঠিত ভূমিভাগ অপেক্ষাকৃত নিচু হয় ।
অস্থির পৃথিবীর সুউচ্চ ভূমিরুপ থেকে সাগর তলের নিম্ন ভাগ এই সমগ্র বৈচিত্রময় অংশের ভূগর্ভের কোন একটি স্থানে স্থির অবস্থানকে ভূতাত্ত্বিক পরিভাষায় সমস্থিতি বলে আখ্যায়িত করা হয় । অন্যভাবে বলা যায় অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার অংশে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় পৃথিবীপৃষ্ঠের পর্বত, মালভূমি, সমভূমি সহ মহাসাগরীয় ভূত্বকের সমান চাপ বা পীড়নের অবস্থা হল সমস্থিতি ।
➲ ধারণার উৎপত্তি : সমস্থিতি ধারণার চিন্তা হটাৎ ভাবে ভূতাত্ত্বিকদের মাথার মধ্যে আসেনি, বরং ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের প্রত্যাশিত অভিকর্ষ বলের গরমিল থেকেই সমস্থিতি ধারণার উদ্ভব । ফরাসী গণিতজ্ঞ তথা ভূতত্ববিদ বৌগুয়ের (Pierre Bouguer) 1735 – 1745, দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার অভিকর্ষের মান নির্ণয় কালে এরূপ অভিকর্ষ বৈষম্য (Gravity Anamaly) সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন । আন্দিজ পর্বতমালার চিম্বোরাজো আগ্নেয়গিরির উত্তর ও দক্ষিণে সমীক্ষা কালে তিনি লক্ষ্য করেন আন্দিজ তার হিসেব অনুযায়ী ওলন কে আকর্ষণ করছে না । যা নিউটনের অভিকর্ষ তত্বকে সমর্থন করে না । 1859 সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের সার্ভেয়ার জেনারেল এভারেস্ট (Sir George Everest) ভারতীয় গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ করার সময় এরূপ বৈষম্য লক্ষ্য করেন l
➥ সমস্থিতি ধারণার উৎস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কিত গবেষণাগুলির মধ্যে এর মূল প্রোথিত রয়েছে । পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কিত গবেষণাগুলির মধ্যে প্রারম্ভিক পর্যায়ের দার্শনিকদের মধ্যে ইতালিয় দার্শনিক লিওনার্দো ভিন্সি (Leonardo di ser Piero da Vinci) অন্যতম । 1923 সালে প্রকাশিত ম্যাকার্ডির (Edward Mccurdy) “Leonardo Da Vinci’s Note-Books Arranged And Rendered Into English” নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় ভিন্সি তার নোট বুকে পৃথিবীর ভারসাম্য (Equilibrium of the Earth) সম্পর্কে তার মতামত উপস্থাপন করেন । তিনি মনে করতেন “Part of the surface of any heavy body will become more distant from the centre of its gravity which becomes of greater lightness.” অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠস্থ কোনও অংশের ভারী দেহপৃষ্ঠ তার মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্র থেকে যতো দূরে অবস্থান করবে ততোই সেটি হালকা হতে থাকবে । অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে সুউচ্চ ভূমিরূপগুলি হালকা পদার্থ দ্বারা গঠিত হবে ।
অষ্টাদশ শতকে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কিত গবেষণার ভিত্তিতে দুটি স্কুল বিকশিত হয়, যার একটি হল ব্রিটিশ স্কুল এবং অন্যটি ফরাসি স্কুল । ব্রিটিশ স্কুলের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী নিউটন (Isaac Newton) এবং ফরাসি স্কুলের নেতৃত্বে ছিলেন ফরাসি জ্যোতির্বিদ ক্যাসিনি (Jacques Cassini) । ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী নিউটন 1665 সালে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ধারণা দেন । ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী হুক (Robert Hooke) 1665 সালে প্রকাশিত তার “Micrographia” নামক গ্রন্থে “Observation 27” নামক অধ্যায়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন আলোচনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন যে ‘পৃথিবীর শিলামণ্ডল বা বহিঃ আবরণ নিম্নস্থ কোন তরল অবস্থানের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে’ । 1666 সালে তিনি পরামর্শ পরামর্শ দেন যে পেন্ডুলামের গতি ব্যবহার করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পরিমাপ করা যেতে পারে । পরবর্তী সময়ে পৃথিবীর গড় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি 9.8 মিটার/সেকেন্ড নির্ণীত হয় । এই সময়কালে নিউটন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সমন্ধে পরীক্ষানিরীক্ষা করে তার সিদ্ধান্তে বলেন ‘মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা‘ (Earth to be flattened at the poles), অর্থাৎ নিউটনের মতে পৃথিবীর আকৃতি “Oblate spheroid” এর অনুরূপ । অন্যদিকে ফরাসি জ্যোতির্বিদ ক্যাসিনি তার গবেষণালব্ধ সিদ্ধান্ত থেকে ব্যাক্ত করেন যে ‘নিরক্ষ রেখা বরাবর পৃথিবী চ্যাপ্টা‘ (Earth to be flattened at the equator), অর্থাৎ ক্যাসিনির মতে পৃথিবীর আকৃতি “Prolate spheroid” এর অনুরূপ। ফলে দুই বিজ্ঞানীর দুই রকম মতবাদের ভিত্তিতে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয় । এই বিতর্ক নিরসনের জন্য পঞ্চদশ লুইসের নির্দেশে Académie Royale des Sciences থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে মূলমধ্যরেখার কৌণিক দৈর্ঘ্য নির্ণয়ের জন্য দুটি বৈজ্ঞানিক দল গঠন করে । একটি দল চার্লস কন্ডামাইন (Charles Marie de La Condamine) এর নেতৃত্বে নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত ইকুয়েডর এর কুইটোতে (Quito, Ecuador, 0°) পৌঁছায় । অন্যদলটি পিয়েরি মৌপারসুইস (Pierre-Louis Moreau de Maupertuis) এর নেতৃত্বে সুমেরু বৃত্তের নিকট ফিনল্যান্ডের টরনিয়ো (Tornio, Finland, 66°) তে পৌঁছায় । উভয় দলের গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে জানা যায় যে, সুমেরু বৃত্তের (57,525 Toise* বা 1,12,116.225 মিঃ ) তুলনায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে (56,753 Toise বা 1,10,611.597 মিঃ) মূলমধ্যরেখার কৌণিক দৈর্ঘ্য 772 Toise বা প্রায় 1,504.628 মিঃ অধিক । অর্থাৎ দুই দলের এই পরীক্ষা থেকে কন্ডামাইন ও মৌপারসুইস সিদ্ধান্ত নেন যে মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর আকৃতি চ্যাপ্টা প্রকৃতির । অর্থাৎ এই গবেষণা নিউটনের মতবাদকেই সমর্থন করে । 1735 থেকে 1745 সালের মধ্যে (The Meridian Arc Measurement in Peru 1735-1745) এই দুই গবেষণাদলের মধ্যে কন্ডামাইনের নেতৃত্বে যে দল সেই দলের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন বৌগুয়ের (Pierre Bouguer) । তিনি এই গবেষণাকালে আন্দিজ পর্বতমালার চিম্বোরাজো আগ্নেয়গিরির উত্তর ও দক্ষিণে সমীক্ষা কালে লক্ষ্য করেন যে, আন্দিজ তার হিসেব অনুযায়ী ওলন কে আকর্ষণ করছে না । অর্থাৎ ঐ স্থানে প্রকৃত অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং পরীক্ষালব্ধ অভিকর্ষজ ত্বরণ এর মানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । যা নিউটনের অভিকর্ষ তত্বকে সমর্থন করে না । নিউটনের মত অনুযায়ী পৃথিবীর আকার হ্রস্বাক্ষ উপগোলক (Oblate spheroid) ধরে নিলে কোন অক্ষাংশ ϕ -তে g এর মান হওয়া উচিৎ γ = 978.03 (1+.0053sin2 ϕ + .000023sin4 ϕ) । উচ্চতার জন্যও g-এর মানের স্বল্প সংশোধন প্রয়োজন হয়, মুক্ত বাতাসে প্রতি মিঃ উচ্চতা বৃদ্ধিতে মান 0.3086 মিলিগ্যাল কমে । কিন্তু উচ্চভূমিতে অবস্থিত কোন স্থানে এর নীচে সমুদ্র তলের ঊর্ধ্বে যে পদার্থ থাকে তার আকর্ষণের জন্য g-এর মান আবার স্বল্প বৃদ্ধি পায় । সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রতি মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে এর মান 0.419 ρ মিলিগ্যাল (ρ = শিলা ঘনাঙ্ক) । g- এর মানের হেরফের এর জন্য প্রযুক্ত উপরোক্ত সমস্ত কারণগুলি সংশোধন করেও বৌগুয়ের কিন্তু তার পরীক্ষালব্ধ স্থানের প্রকৃত অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং পরীক্ষালব্ধ অভিকর্ষজ ত্বরণ এর মানের মধ্যে পার্থক্য দূর করতে পারেন নি । ফলে তার কার্যাবলীর মাধ্যমে প্রথম অভিকর্ষ অসঙ্গতি (Gravity Anamaly) বিষয়টি সুস্পষ্ট হয় । তিনি এর কারণ অনুসন্ধান করে যুক্তি দেন যে, আন্দিজ পর্বতমালার শিলার কম ঘনাঙ্ক এর জন্যই এই বিচ্যুতি । অর্থাৎ আন্দিজ পর্বতমালা হালকা পদার্থ দ্বারা গঠিত । বৌগুয়ের এর এই সিদ্ধান্ত লিওনার্দো ভিন্সির দৃষ্টিভঙ্গিকেউ সমর্থন করে । এই অভিকর্ষ অসঙ্গতি বৌগুয়ের অভিকর্ষ অসঙ্গতি (Bouguer Gravity Anamaly) নামেও পরিচিত । বৌগুয়ের অভিকর্ষ অসঙ্গতি নির্ণয়ের সূত্রটি হলঃ Δg = g – γ + 0.3086h – 0.0419ρh । অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর শিলার ঘনাঙ্কের যে প্রভাব তাকে বলা হয় বৌগুয়ের ভর ফল (Bouguer mass effect) । 1749 সালে প্রকাশিত “La Figure de la Terre” (ইং : “The Shape of the Earth”) নামক গ্রন্থে বৌগুয়ের অভিকর্ষ অসঙ্গতি সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা প্রদান করেন । বৌগুয়ের এর অভিকর্ষ অসঙ্গতি বিষয়টি লক্ষ্য করলে দেখাযায় যে, এই অসঙ্গতি উচ্চ মহাদেশীয় অংশে ঋণাত্মক প্রকৃতির । অর্থাৎ সুউচ্চ মহাদেশীয় অংশে g এর মান যা হওয়া উচিৎ তা থেকে কম হয় । অন্যভাবে বলা যায় সুউচ্চ মহাদেশীয় অংশ দ্বারা ওলন যতোটা আকর্ষিত হবার কথা ততটা হয়না । আবার অন্যদিকে সামুদ্রিক অববাহিকায় অভিকর্ষ অসঙ্গতি ধনাত্মক প্রকৃতির, অর্থাৎ মহাসাগরীয় অংশে g এর মান যা হওয়া উচিৎ তা থেকে অধিক হয় । অন্যভাবে বলা যায় মহাসাগরীয় অংশ দ্বারা ওলন যতোটা আকর্ষিত হবার কথা তার থেকে অধিক আকর্ষিত হয় । এই দুই অবস্থার প্রেক্ষিত বলা যায় ভূঅভ্যন্তরে এমন কোন স্থান রয়েছে যেখানে পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূমিরূপগুলি দ্বারা প্রদত্ত্ব ভর সমভাবে আপতিত হয়, যা থেকে পরবর্তী সময়ে সমস্থিতি ধারণার উদ্ভব হয় ।
সমসাময়িক কালে, ফরাসি খনিজবিদ তথা ভূতাত্ত্বিক গুয়েটারড (Jean-Étienne Guettard) 1751 সালে তার “Memoir on the physical constitution of the globe, and particularly on the nature and situation of mountains” নামক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন যে ‘পর্বতশ্রেণীগুলি তার নিম্নে অবস্থিত একটি ঘন স্তরের উপর অবস্থান করছে’ ।
➥ ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক লেইল (Sir Charles Lyell) 1830-33 সালে তিন খণ্ডে প্রকাশিত তার “Principles of Geology” নামক গ্রন্থে “Hydrostatic Equilibrium” ধারণার প্রবর্তন করেন । তিনি তার গ্রন্থে ধারণা পোষণ করেন যে, পৃথিবী পৃষ্ঠ সময়ের সাপেক্ষে ক্রমাগত বিশ্রাম এবং পরিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে গঠন করে ।
Académie Royale des Sciences এর গবেষণার প্রায় এক শতাব্দী পর 1840-59 সালের মধ্যে তৎকালীন ভারতীয় সার্ভেয়ার জেনারেল তথা ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক এভারেস্ট (George Everest) এর নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশে দ্রাঘিমা রেখার কৌণিক দৈর্ঘ্য পরিমাপের কার্যাবলী সংঘটিত হয় । এই জরিপ কার্যে ভারতের এক মধ্যরেখার ওপর তিনটি স্থান নির্বাচন করে জরিপ কার্য সম্পাদন করা হয় । স্থান তিনটি হলঃ i. শিবালিক পর্বতের পাদদেশে 29°30’48” অক্ষাংশে অবস্থিত কালিয়ানা (বর্তমানে স্থানটি হরিয়ানা রাজ্যের ভিওয়ানি জেলার একটি গ্রাম); ii. কালিয়ানার 375 মাইল দক্ষিণে 29°30’48” অক্ষাংশে 24°07’11” অক্ষাংশে অবস্থিত কালিয়ানপুর (বর্তমানে স্থানটি উত্তর প্রদেশের কানপুর জেলায় অবস্থিত) এবং iii. কালিয়ানপুরের 425 মাইল দক্ষিণে 18°3’15” অক্ষাংশে অবস্থিত দামারগিদা (Damargida; বর্তমানে স্থানটি তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাঙ্গা রেড্ডি জেলার একটি গ্রাম) । জরিপ কালে কালিয়ানা ও কালিয়ানপুরের মধ্যে ট্রানজিট থিওডোলাইট এর মাধ্যমে ত্রিভুজ পদ্ধতিতে (Triangulation) এবং জ্যোতির্বিদ্যা পদ্ধতিতে দুই স্থানের মধ্যে দূরত্ব পরিমাপকালে উভয় ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক ফলাফল পাওয়া যায় । ট্রানজিট থিওডোলাইট এর মাধ্যমে ত্রিভুজ পদ্ধতিতে উভয় স্থানের মধ্যে অক্ষাংশগত পার্থক্য দাঁড়ায় 5° 23′ 42″.294 এবং জ্যোতির্বিদ্যা পদ্ধতিতে উভয় স্থানের মধ্যে অক্ষাংশগত পার্থক্য দাঁড়ায় 5° 23′ 37″.058 । অর্থাৎ উভয় পদ্ধতিতে জরিপের অক্ষাংশগত অন্তর দাঁড়ায় 5″.236 । জরিপের এই ফলাফল দেখে তৎকালীন কলকাতার আর্চডিকান, তথা ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক প্রাট (John Henry Pratt) সিদ্ধান্ত নেন যে “the difference 5″.236 must . . . be attributed to some other cause than error in the geodetic operations.**” অর্থাৎ এই পার্থক্যের পিছনে জিওডেটিক কার্যাবলীর ভুল নয়, বরং অন্য কোন কারণ রয়েছে । অন্য কারণ হিসাবে তিনি হিমালয় পর্বতকে দায়ী করেন । তার মতে, যেহেতু কালিয়ানা হিমালয় পর্বতের সানুদেশে অবস্থিত সেহেতু কালিয়ানা থেকে পর্যবেক্ষণ কালে হিমালয় পর্বত থিওডোলাইটের প্লাম্বরেখাকে উত্তর দিকে আকর্ষণ করেছে । ফলে প্লাম্বরেখা উল্লম্ব অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়েছে আর এর স্বাপেক্ষে নির্ণীত নক্ষত্রের উন্নতি কোণ ও কালিয়ানার অক্ষাংশ নির্ণয় ভুল হয়ে গেছে । প্রাট হিমালয় থেকে প্রাপ্ত শিলার গড় ঘনাঙ্কের সাহায্যে হিমালয়ের ভর নির্ণয় করেন এবং সেই হিসাবে প্লাম্বরেখা 15.885″ বিচ্যুত হওয়া উচিৎ বলে নির্ণয় করেন । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিচ্যুতি ঘটে 5″.236 । এই ঘটনার ব্যাখ্যায় তিনি সম্ভাব্য দুটি কারণ উত্থাপন করেন, যথাঃ i. হিমালয়ের শিলার যে ঘনাঙ্ক ধার হয়েছে তা সঠিক নয়, অর্থাৎ হিমালয় পর্বতের অভ্যন্তরভাগ বিশেষ হালকা শিলা দ্বারা গঠিত বা ফাঁপা প্রকৃতির । অথবা ii. সমুদ্রপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে হিমালয় পর্বত একদিকে যেমন অতিরিক্ত পদার্থের সংস্থান করে তেমনি অন্যদিকে হিমালয় পর্বতের নিম্নদেশের শিলা সন্নিহিত অংশের শিলা থেকে হালকা । ফলে হিমালয় পর্বত দ্বারা প্লাম্বকে যতটা আকর্ষণ করা উচিৎ ছিল তা করেনি । প্রথম কারণটি বাস্তবসম্মত নয় বলে বাতিল করা হয়, এবং দ্বিতীয় কারণটির মধ্যে সত্যতা নিহিত রয়েছে বলে অনুভূত হয় । দ্বিতীয় কারণের জন্য এই অসঙ্গতি বৌগুয়ের অভিকর্ষ অসঙ্গতিকেই নির্দেশ করে । প্রাট এই ঘটনা সম্পর্কিত সম্যক ধারণা 1855 সালে বিশদে উপস্থাপন করেন । ফলে ভূমিরূপবিজ্ঞানে এক নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটে যা, পরবর্তী সময়ে ডাটন দ্বারা “Isostasy” নামে অভিহিত হয় ।
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
➲ নামকরণ : মার্কিন ভূতত্ত্ববিদ ক্লারেন্স এডওয়ার্ড ডাটন (Clarence Edward Dutton) 1889 সালে সর্বপ্রথম ‘Isostasy‘ শব্দটি ব্যবহার করেন। 1889 সালের 27 এপ্রিল ওয়াশিংটনের ফিলোসফিক্যাল সোসাইটি (Philosophical Society of Washington)-দ্বারা আয়োজিত এক ভাষণে তিনি Isostasy (সমস্থিতি)-ধারণাটিকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন। পরবর্তীকালে 1892 সালে “Bulletin of the Philosophical Society” এর Vol – XI এর 51-64 নম্বর পাতায় তৃতীয় প্রবন্ধ হিসাবে প্রকাশিত তার “On some of the greater problems of physical geology” প্রবন্ধে 53 নম্বর পাতায় প্রথমবার মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয় । তার মতে তিনি বিষয়টিকে “Isobary” নামে অভিহিত করার পক্ষপাতি ছিলেন কিন্তু শব্দটি ইতিপূর্বে ব্যবহার হয়ে যাওয়ায় বিকল্প হিসাবে ‘Isostasy’ শব্দটি ব্যবহার করেন। এখান থেকে পড়ো ➣ ভূগোলের বিষয়বস্তু ও আলোচনাক্ষেত্র
প্রসঙ্গতঃ স্কটিশ আবহবিদ বুচান (Alexander Buchan) 1867 সালে প্রকাশিত তার “A Handy book of Meteorology” নামক গ্রন্থে, আবহাওয়া মানচিত্রে সম বায়ুমণ্ডললীয় চাপ যুক্ত অঞ্চলগুলিকে যুক্ত করে প্রাপ্ত রেখাকে “Isobar” হিসাবে ব্যবহার করেন । পরিভাষা সংক্রান্ত সঙ্কটের করনে হয়তো বা তাই ডাটন “Isobary” শব্দটি পরিত্যাগ করে ‘Isostasy‘ শব্দটিই ব্যবহার করা সমীচীন মনে করেছিলেন ।
➥ ব্যুতপত্তিগত অর্থ : “Isostasy” শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ “Isostasios” যার “Iso”= “Equal” বা “সমান” এবং “Stasoes” শব্দের অর্থ হল “State” “অবস্থান” সুতরাং Isostasy শব্দের অর্থ হল সমান অবস্থান বা সমস্থিতি । ➣ পরবর্তী অংশ