একাদশ ভূগোল নির্যাস : প্রথম সেমিস্টার

Branches of Geography

Branches of Geography

পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : প্রথম সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর Physical Geography এর Unit-I এর Geography as a discipline অধ্যায় এর Branches of Geography সম্পর্কে । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦

Branches of Geography


Branches of Geography

ভূগোলের শাখা : ভূগোল বিষয়ের উত্থান ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় প্রাথমিকভাবে প্রাচীন গ্রিসে এরাটোস্থেনিসের (Eratosthenes : 276 – 194 BC) কার্যাবলীর মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে ভূগোল বিষয়ের সূচনা হয় । সেই সময় ভূগোল সমন্ধে ‘পৃথিবীর বর্ণনা‘ ভিত্তিক ধারণা থাকলেও সময়ের স্রোতে সে ধারণা ছাড়িয়ে গিয়ে সংকীর্ণ থেকে বিস্তৃতরূপে ছড়িয়ে পড়তে থাকে । ফলে ভূগোল শাস্ত্রের পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে । এরূপ পরিধির সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিটি বিষয়ের সাথে ভূগোল বিষয়টি ক্রমশঃ জড়িয়ে পড়তে থাকে । কালক্রমে ভূগোল বিষয়টি বিভিন্ন শাখাপ্রশাখায় বিভক্ত হতে থাকে, ফলে কিছু স্বতন্ত্র ও কিছু আন্তঃসম্পর্কিত শাখার বিকাশ ঘটে । এরাটোস্থেনিসের ভূগোল স্বতন্ত্রভাবে প্রথম প্রধান শাখা লাভ করে জার্মান ভূগোলবিদ হুমবোল্ডের (Alexander von Humboldt) এর কার্যাবলীর মাধ্যমে । হুমবোল্ড 1845 থেকে 1862 সালের মধ্যে পাঁচ খন্ডে প্রকাশিত তার “কসমস” (Cosmos : A Sketch of the Physical Description of the Universe) নামক গ্রন্থের মাধ্যমে মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক ঘটনাবলী সমন্ধে ব্যপক ধারণার উন্মোচন করেন, যেখানে জ্যোতির্বিদ্যা, ভূতত্ত্ব, ভূগোল, জীবাশ্মবিদ্যা, জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং প্রাণীবিদ্যা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয় । এই কার্যাবলীর প্রভাবে ভূগোলের আলোচনায় প্রাকৃতিক ঘটনাবলী যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করে এবং প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে আলোচনার উপাদান করে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography) এর সূচনা হয় । এই কারণে হুমবোল্ডকে প্রাকৃতিক ভূগোলের জনক (Father of Physical Geography) ও বলা হয় ।
◈ ভূগোল থেকে প্রাকৃতিক ভূগোলের স্বতন্ত্রতার সাথে সাথে ভূগোলের আলোচনায় মানুষের ভূমিকা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে, ফলে ভূগোলে স্বতন্ত্রভাবে মানুষের ভূমিকা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় । এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই 1880-90 এর দশকে ভূগোলে মানবীয় বিষয়বস্তুর সূচনা হয় । এক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন অপর জার্মান ভূগোলবিদ রাটজেল (Friedrich Ratzel) । তিনি 1882 সালে ‘Anthropogeographie‘ নামে ভূগোলের স্বতন্ত্র শাখায় মানুষ ও তার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা আরম্ভ করেন । 1895 নাগাদ ফরাসি ভৌগলিকগন একে ‘La Geographie Humaine’ নামে অভিহিত করেন এবং তা থেকে ইংরাজিতে ‘Human Geography‘ শব্দের উত্থান ঘটে । এভাবেই ভূগোলের যে স্বতন্ত্র শাখায় মানব ও তার কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা আরম্ভ হয় সেটি মানবীয় ভূগোল নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । যদিও মানবীয় ভূগোলের সূচনায় ফরাসি ভৌগলিক ব্লাস (Paul Vidal de La Blache) এবং জার্মান ভূগোলবিদ রিটার (Carl Ritter) এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।
অর্থাৎ বিংশ শতকের পূর্বেই ভূগোল বিষয়টি দুটি প্রধান ক্ষেত্রে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার একটি হলঃ প্রাকৃতিক ভূগোল এবং অন্যটি হলঃ মানবীয় ভূগোল । এই দুই শাখার আলোচনার বিষয়বস্তুতে বেশকিছু পরিগণনা যন্ত্র, পরিসংখ্যান, যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার হতে থাকে । অর্থাৎ দুটি বিভাগের বিষয়বস্তুর আলোচনার জন্য অপর একটি বিভাগের প্রয়োজন হতে থাকে । এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই ফরাসি মানচিত্রবিদ তথা লোরেন বিশ্ববিদ্যালযয়ের গবেষক হাইডু (Ionel Haidu) 2006 সালে “Geographia Technica” নামক জার্নাল প্রকাশ করে “Technical Geography” নামক ভূগোলের অপর একটি শাখার বিকাশের ক্ষেত্রে প্রচার চালিয়ে যায় । এই প্রচারের ভিত্তিতে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ চলে এবং 2009 সালে যৌথভাবে UNESCOEOLSS দ্বারা “Geography Encyclopedia” প্রকাশিত হলে সেখানে “Technical Geography” বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয় । Encyclopedia of Life Support Systems (EOLSS) এর সম্পাদক সালা (Maria Sala) 2009 সালে ভূগোলের আলোচনা বিষয়টিকে চারটি প্রধান অংশে বিভক্ত করেন, যথাঃ Foundations of Geography, Physical Geography, Human Geography and Technical Geography । এর ফলে ভূগোলের আরো একটি শাখার সূচনা হয়, যা প্রযুক্তি ভূগোল (Technical Geography) নামে পরিচিতি লাভ করে । অর্থাৎ বর্তমান সময় পর্যন্ত ভূগোল মূলতঃ প্রধান তিনটি শাখায় বিভক্ত, যথাঃ A. প্রাকৃতিক ভূগোল (Physical Geography), B. মানবীয় ভূগোল (Human Geography) এবং C. প্রযুক্তি ভূগোল (Technical Geography) । বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সিলেবাস লক্ষ্য করলেও দেখা যায় ভূগোল বিষয়ের সমগ্র সিলেবাসটিকে এই তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি ভূগোলের অংশে ব্যবহারিক (Practical) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।

♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার

♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)

প্রাকৃতিক ভূগোলের শাখা : ভূগোলের আলোচনার একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল প্রাকৃতিক ভূগোল । সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে এবং মানবীয় জ্ঞানের পরিধির বিস্তারের সাথে সাথে ভূগোলের এই আলোচনা ক্ষেত্রেরও বিকাশ ঘটতে থাকে । ধীরেধীরে প্রাকৃতিক ভূগোল বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে । এই ভূগোলের প্রধান কয়েকটি শাখা হলঃ i. ভূমিরূপবিদ্যা (Geomorphology), ii. জলবায়ু বিদ্যা (Climatology), iii. জীব ভূগোল (Biogeography), iv. জলবিদ্যা (Hydrology), v. মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography) vi. গাণিতিক ভূগোল (Mathematical Geography) ইত্যাদি ।

ভূমিরূপবিদ্যা (Geomorphology) : প্রাকৃতিক ভূগোলের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাচীন শাখা হল ভূমিরূপবিদ্যা । প্রাকৃতিক ভূগোলের এই শাখায় মূলতঃ পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূমিরূপ ও তার উদ্ভবের কারন সমন্ধে আলোচনা করা হয় । এই শাখায় একাধারে পৃথিবীর অন্তর্জাত ও বহির্জাত শক্তিগুলো দ্বারা পৃথিবী পৃষ্ঠে অবিরত সংঘটনশীল ভূমিরূপ বিবর্তনের কার্যকারণ সমন্ধ অনুধাবন করা হয় । অর্থাৎ এই শাখায় অশ্মমণ্ডল বা ভূত্বকে সংঘটিত সমস্ত ঘটনাবলী অন্তর্ভুক্ত । ভূমিরূপবিদ্যা শাখাটি বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা ভূতত্ত্ব (Geology) এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ।
জলবায়ু বিদ্যা (Climatology) : আবহাওয়া বিজ্ঞানের ভৌগলিক সংস্করণ হল জলবায়ুবিদ্যা । প্রাকৃতিক ভূগোলের যে শাখায় পৃথিবীর জলবায়ু সমন্ধে সাম্যক ধারণা প্রদানের সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলের গঠন, রাসায়নিক সংগঠন, বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনাবলী প্রভৃতি বহুবিধ বিষয়ে আলোচনা করা হয় সেই শাখা জলবায়ুবিদ্যা নামে অভিহিত । অর্থাৎ বলা যায় বায়ুমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলের সাথে সম্পর্কিত সমস্তপ্রকার পার্থিব ঘটনাবলী জলবায়ুবিদ্যায় আলোচনা করা হয়ে থাকে ।
জীব ভূগোল (Biogeography) : প্রাকৃতিক ভূগোলের যে শাখায় ভৌগলিক স্থান এবং ভূতাত্ত্বিক সময়ের মাধ্যমে প্রজাতি এবং বাস্তুতন্ত্রের বিতরণের অধ্যয়ন করা হয় তা জীব ভূগোল নামে পরিচিত । ভূগোলের এই শাখায় জীবের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তন, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর সাথে জীবের আন্তঃসম্পর্ক, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জীবের বিতরণ, পরিবেশের উপর জীব জগতের প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয় ।
জলবিদ্যা (Hydrology) : বারিমণ্ডলের মূল উপাদান সমুদ্র ও সংশ্লিষ্ট পার্থিব উপাদান নিয়ে প্রাকৃতিক ভূগোলের এই শাখা বিকশিত হয়েছে । সমুদ্র বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এই শাখার বিকাশ । প্রাকৃতিক ভূগোলের এই শাখায় সমুদ্রের উৎপত্তি, সামুদ্রিক জলবণ্টন, সামুদ্রিক জলের প্রকৃতি ও সামুদ্রিক স্রোত, সমুদ্র তলদেশের প্রকৃতি, জলবায়ুর উপর সমুদ্রের প্রভাব সামুদ্রিক প্রাণী ও সামুদ্রিক সম্পদ, সমুদ্র কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলী ইত্যাদি সমন্ধে আলোচনা করা হয় ।
মৃত্তিকা ভূগোল (Soil Geography) : প্রাকৃতিক ভূগোলের এই শাখায় মৃত্তিকার উদ্ভব ও সংরচনা, মৃত্তিকার উপাদান, মৃত্তিকার স্তর বিভাজন, পৃথিবীর মৃত্তিকার বণ্টন; মৃত্তিকা-জলবায়ু-স্বাভাবিক উদ্ভিদের সম্পর্ক, মৃত্তিকা ও পরিবেশ, মৃত্তিকা ক্ষয় ও দূষণ, কৃষিকাজ ও মৃত্তিকা ইত্যাদি বহুবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
গাণিতিক ভূগোল (Mathematical Geography) : ভূগোলের বিভিন্ন ক্ষেত্রের আলোচনার প্রয়োজনে ব্যবহৃত গাণিতিক বিষয়গুলো একত্রিত করে ভূগোলের যে শাখায় আলোচনা করা হয় তা গাণিতিক ভূগোল নামে অভিহিত । ভূগোলের এই শাখাটি প্রাকৃতিক ভূগোলের নবীন শাখা । এই শাখায় পৃথিবী সহ সৌরজগতের উৎপত্তির রহস্য উন্মোচন, বিভিন্ন মহাজাগতিক উপাদানের কার্যকারণ সম্পর্ক সূত্র, তত্ত্ব ও গাণিতিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে আলোচনা করা হয় । এছাড়া পৃথিবী পৃষ্ঠে সংঘটিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর ব্যখ্যার ক্ষেত্রেও গাণিতিক ভূগোলের প্রয়োগ হয়ে থাকে ।


← পূর্ববর্তী পোস্ট : ভূগোলের আলোচনাক্ষেত্র ও বিষয়বস্তু

One thought on “Branches of Geography

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page