Concept of Isostasy & Airy
Concept of Isostasy & Airy
পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের Physical Geography এর Unit-I এর Geography as a discipline অধ্যায় এর Concept of Isostasy & Airyসম্পর্কে । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦
Concept of Isostasy & Airy
সমস্থিতি সম্পর্কিত এইরির ধারণা : এইরি 1855 সালে সমস্থিতি সংক্রান্ত তার মতবাদ উপস্থাপন করেন । এইরি ছিলেন একজন ব্রিটিশ গণিতজ্ঞ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী । তিনি প্রাটের গবেষণাপত্র পড়ে অভিকর্ষ বৈষম্য ও ভূমিরূপের ভরের ভূঅভ্যন্তরীণ বণ্টন সম্পর্কে পদার্থের ভাসমানতার ধর্মের (Law of Floatation) ওপর ভিত্তি করে 1855 সালে “On the computations of the effect of the attraction of the mountain masses as disturbing the apparent astronomical latitude of stations in geodetic surveys” নামক গবেষণা প্রবন্ধে তার ভূত্বকের ভারসাম্য তত্ত্ব (Crustal Equilibrium Theory) বা সমস্থিতি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।
এইরির সমস্থিতি ধারণাটি প্যাসকেলের সূত্র (Pascal’s law), আর্কিমিডিসের বস্তুর প্লবতা নীতি (Principle of buoyancy) এবং পদার্থের ভাসমানতার ধর্মের (Law of Floatation) ওপর প্রতিষ্ঠিত। এইরির মতে, ভূপৃষ্ঠের দৃশ্যমান ভূমিরূপগুলি তাদের নিজস্ব উচ্চতার সাথে সাযুজ্য রেখে ভূগর্ভের একটি অঞ্চল বরাবর বা অন্তঃস্তরে (Substratum) ভাসমান অবস্থায় রয়েছে । অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের ভূমিরূপগুলি ভূপৃষ্ঠের উপর যেমন আলাদা আলাদা উচ্চতায় অবস্থান করছে তেমনি ভূঅভ্যন্তরেও সেগুলি আলাদা আলাদা গভীরতায় প্রোথিত হয়েছে । সোজা কথায় ভূগর্ভের কোন নির্দিষ্ট তলে ভূপৃষ্ঠের ভূমিরূপগুলি সমান চাপ দ্বারা অবস্থান করছে না, বরং প্রোথিত মূলের (Root) ভিত্তিতে তারা বিভিন্ন গভীরতায় অবস্থিত । ভূপৃষ্ঠে যে ভূমিরূপের উচ্চতা যতো বেশি ভূ-অভ্যন্তরে তার মূল ততো গভীরে অবস্থান করছে, এবং এভাবেই পৃথিবীর ভূভাগ সন্তুলিত অবস্থায় রয়েছে । তার মতে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন ভূমিরূপের ঘনাঙ্ক একই থাকে শুধুমাত্র তাদের দৈর্ঘ্য আসমান হয় । অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠের সকল ভূমিরূপের ঘনত্ব সর্বদা সমান, শুধুমাত্র তাদের উচ্চতা বা পুরুত্বের পার্থক্য ঘটে। এই দৈর্ঘ্যের পার্থক্যের জন্য অভিকর্ষ টানেরও পার্থক্য ঘটে । ভূপৃষ্ঠের কোন ভূমিরূপ যখন প্লাম্বরেখাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে তখন ঐ ভূমিরূপের ভূঅভ্যন্তরে প্রোথিত অংশ প্লাম্বরেখার উপর ভূমিভাগের আকর্ষণকে কমায়, ফলে প্লাম্বরেখা যেরকম আকর্ষিত হবার কথা ততোটা আকর্ষিত হয় না । এর ফলে অভিকর্ষ বিচ্যুতি বিষয়টি ধরা পড়ে ।
এইরির মতবাদের স্বাপেক্ষে বাস্তব উদাহরণ হিসাবে হিমশৈলের কথা বলা যায় । সমুদ্র জলে হিমশৈল অবস্থান করলে তার 1/10 ভাগ আমরা দেখতে পাই, বিপরীতে 9/10 ভাগ জলের ভেতরে অবস্থান করে । অনুরূপভাবে ভূপৃষ্ঠের ভূমিরূপগুলি উচ্চতা অনুযায়ী তাদের অধিকাংশ ভূগর্ভস্থ লাভা স্তরে নিমজ্জিত থাকে ।
ফরাসি গণিতবিদ ব্লেজ প্যাসকেল (Blaise Pascal) 1653 সালে “তরল-চাপ সঞ্চালন নীতি” প্রতিষ্ঠিত করেন, যা “Treatise on the Equilibrium of Fluids” নামক গ্রন্থে 1663 সালে প্রকাশিত হয় । প্যাসকেলের সূত্রে বলা হয়েছে, স্থির ভারসাম্যের একটি তরলের মধ্যে, একই উচ্চতায় প্রতিটি বিন্দুতে উদ্স্থৈতিক চাপ (Hydrostatic pressure) একই থাকে। অর্থাৎ একটি আবদ্ধ স্থির তরলের যেকোনো বিন্দুতে চাপের পরিবর্তন তরলের সকল বিন্দুতে অবিচ্ছিন্নভাবে সঞ্চারিত হয়। প্রাচীন গ্রীক পদার্থবিজ্ঞানী আর্কিমিডিস (Archimedes) নিমজ্জন সূত্র উপস্থাপন করেন । এই সূত্র অনুসারে কোনো বস্তুকে কোনো তরলে নিমজ্জিত করা হলে ঐ নিমজ্জিত পদার্থ দ্বারা অপসৃত তরল পদার্থের ওজনের সমান একটি ঊর্ধ্বমুখী বল প্রয়োগ করে। অপরদিকে পদার্থের ভাসমানতার ধর্মের মূল কথা হল যদি কোন উপাদানের ঘনত্ব তরলের ঘনত্বের থেকে অধিক হয় তাহলে ঐ উপাদানটি নিমজ্জিত হবে, আবার উপাদানের থেকে তরলের ঘনত্ব অধিক হলে উপাদানটি ভাসমান অবস্থায় থাকবে।
➥ এইরির সমস্থিতি মতবাদের পরীক্ষা ও সীদ্ধান্ত : এইরি প্রদত্ত্ব ধারণাটিকে সহজে বোঝার জন্য মডেলের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব । পরীক্ষাটি করার জন্য জন্য, i. সমঘনত্বযুক্ত কিন্তু বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের কয়েকটি একই ধাতব দণ্ড নিতে হবে । ii. একটি পারদপূর্ণ পাত্র নিতে হবে ।
➥ পরীক্ষা : আমরা ধাতব দণ্ড হিসাবে বেশ কয়েকটি তামার দণ্ড নিলাম, যাদের ঘনত্ব সমান কিন্তু দৈর্ঘ্য ভিন্ন । এবার পারদ পূর্ণ পাত্রে ঐ তামা দণ্ডগুলি ডুবিয়ে দিলাম । এবার পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবো তামা দন্ডগুলি তাদের উচ্চতার অনুপাতে পারদে ডুবে রয়েছে। অর্থাৎ পারদ পাত্রের যে যে দন্ডের উচ্চতা বেশি সেগুলি পারদের মধ্যে বেশি গভীরে নিমজ্জিত রয়েছে, এবং যেগুলির উচ্চতা কম সেগুলি কম গভীরতায় নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে । নিম্নের চিত্র থেকে পরীক্ষাটি সহজেই বোঝা যাবে ।
➥ সীদ্ধান্তঃ উপরিউক্ত পরীক্ষা থেকে এই সীদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ভূপৃষ্ঠের উপরের (সম ঘনত্বযুক্ত) যেসমস্ত ভূমিরূপের উচ্চতা বেশি সেগুলি ভূওভ্যন্তরে বেশি গভীরে নিমজ্জিত অবস্থায় থেকে ভারসাম্য বজার রেখেছে। অনুরূপভাবে, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি – মহাদেশীয় ভূত্বকের এই বিভিন্ন অংশগুলি ভাসমানতার নিয়মানুসারে বিভিন্ন উচ্চতায় ভারী ও ঘন পদার্থের ওপর ভারসাম্য বজায় রেখে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। এইরির মতে, ভূপৃষ্ঠের যেসব ভূমিরূপ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উঁচু হবে তার গভীরতা তত বেশি হবে, অপরদিকে এই উচ্চতা যত কম হবে গভীরতাও তত কম হবে। এই হিসেবে পৃথিবীর সমস্ত ভূমিরূপ মহীসঞ্চরণকে উপেক্ষা করেই সমস্থিতি বজায় রেখেছে। এইরির মতে মহাদেশ বা SiAl এর অংশগুলি (পর্বত, মালভূমি, সমভূমি) সাধারণত একই ধরনের ঘনত্বযুক্ত হালকা শিলায় গঠিত (2.7gm/cm3) এবং মহাসাগরীয় ভূত্বক বা SiMa অপেক্ষাকৃত ভারী ঘনত্বযুক্ত (3.0gm/cm3) হয় । এইরির এই মতবাদটিকে প্রোথিত মতবাদ বা শিকড় মতবাদ (Root Hypothesis) নামে অভিহিত করা হয় । vi. ।
প্রসঙ্গতঃ এইরি তার সমস্থিতি ধারণার স্বাপেক্ষে এরূপ কোন পরীক্ষা করেননি । এইরির ধারণার ভিত্তিতে সমস্থিতি ধারণাটিকে উপস্থাপনের জন্য সমঘনত্বযুক্ত কিন্তু বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের কাঠের টুকরো নিয়ে আর্থার হোমস্ 1923 সালে “PRINCIPLES OF PHYSICAL GEOLOGY” নামক গ্রন্থে সম্ভবতঃ প্রথম পরীক্ষাটি করেন । পরবর্তী সময়ে 1927 সালে বোয়ি তার গ্রন্থে এইরির ধারণাকে বোঝার জন্য তামার দণ্ড নিয়ে আরো একটি পরীক্ষা করেন ।
➥ এইরির সমস্থিতি তত্ত্বের ত্রুটি : 1855 সালে দেওয়া এইরির সমস্থিতি মতবাদটি বিজ্ঞানী মহলে ব্যাপক সাড়া ফেললেও এই তত্ত্বের কিছু দুর্বল দিক রয়েছে । বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন সময়ে তাই এইরির মতবাদকে সমালোচনা করেছেন । প্রথম সমালোচনাটি আসে প্রাটের থেকে । প্রাট 1859 সালে সমস্থিতি সম্পর্কিত তার দ্বিতীয় গবেষণাপত্রে এইরির মতবাদের তিনটি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেন, যথাঃ প্রথমত এইরি তার তত্ত্বকে একটি পাতলা ভূত্বক অনুমানের উপর ভিত্তি করে উপস্থাপন করেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভূত্বক এতো পাতলা নয় । ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক উইলিয়াম হপকিন্স এর মতে ভূত্বক নুন্যতম 150 কিঃমিঃ পুরু । দ্বিতীয়ত, এইরি অনুমান করেছিলেন যে সন্নিহিত ভূত্বক অন্তর্নিহিত লাভার চেয়ে কম ঘন ছিল । তৃতীয়ত, এইরির মতবাদ পৃথিবীর প্রচলিত সংকোচন তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। যদিও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা স্পষ্টতই সংকোচন তত্ত্বের প্রতি প্র্যাটের আনুগত্যের ফল। এছাড়াও অন্যান্য যেসমস্ত ক্ষেত্রে এইরির মতবাদ সমালোচিত হয় সেগুলি হলঃ i. এইরি তার তত্ত্বে ভূত্বকের বিভিন্ন এককগুলির (পর্বত, মালভূমি, সমভূমি) ঘনত্ব একরকম ধরেন। কিন্তু বাস্তবে শিলার প্রাধান্য অনুসারে বা খনিজের তারতম্যে এককগুলির ঘনত্বের তারতম্য ঘটে। ii. গভীরতা বৃদ্ধির সাথে তাপ ও চাপের বৃদ্ধিকে তিনি উপেক্ষা করেছেন। সাধারনতা প্রতি 32 মিটারে 1°c হারে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই হিসাবে হিমালয়ের নিচে প্রায় 40 কিমি দীর্ঘ শিকড়ের কথা ধারণা করা হয়েছে সেই যুক্তি গ্রাহ্য করা যায় না। কিন্তু হাইস্কানেন তার গবেষণার মাধ্যমে দেখান যে, গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বস্তুর ঘনত্ব এমন ভাবে বৃদ্ধি পায় যে উষ্ণতা ও চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পদার্থ গলে যায় না ।
iii. এইরির ভাসমানতার নিয়ম অনুসারে কোনো ভূমিরূপ ভূপৃষ্ঠের ওপর ও নীচে দৈর্ঘ্যের অনুপাত 1:9 ধরা হয়। তাহলে হিমালয়ের নিম্নাংশকে ভূত্বকের গভীরে 79,632 মিটার পর্যন্ত প্রোথিত থাকতে হবে। কিন্তু এতো গভীরের অনেক আগেই হিমালয়ের নিম্নাংশ গলিত হয়ে যেতে পারে। হেইসকানেনের মতে, ভাসমানতার তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে সমস্থিতির ধারণাটি হিমশৈলের নীতি মেনে চলে না।
iv. এছাড়াও, অপেক্ষাকৃত হালকা মহাদেশীয় (সিমা, 2.7gm/cm3) ভূভাগের পক্ষে ভারি মহাসাগরের (সিয়াল, 3.0gm/cm3) মধ্যে এত গভীরে প্রোথিত থাকা এক প্রকার অসম্ভব।
iv. এইরির তত্ত্বটি অল্প যেকোনো স্থানের পক্ষে প্রযোজ্য হয় না।
➥ প্রাট ও এইরির সমস্থিতি মতবাদের পার্থক্য : প্রাট ও এইরির সমস্থিতি মতবাদ একই বিষয় কেন্দ্রিক হলেও দুই মতবাদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, যথাঃ i. প্রাট তার মতবাদে উল্লেখ করেন যে, পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূমিরূপগুলির ঘনত্ব আলাদা আলাদা, এবং এগুলি ভূগর্ভস্থ একটি নির্দিষ্ট তল বরাবর সমানভাবে চাপ প্রদান করে; যেখানে এইরির তার তত্ত্বে বলেন পৃথিবী পৃষ্ঠের ভূমিরূপগুলির ঘনত্ব একই এবং এগুলি উচ্চতা অনুযায়ী ভূগর্ভে প্রোথিত হয়ে আলাদা আলাদা গভীরতায় তাদের চাপ প্রদান করে । ii. প্রাটের মতে ভূগর্ভের একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় চাপ সমান বলে এবং ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ভূমিরূপের ঘনত্ব বিভিন্ন বলে অভিকর্ষ বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়; যেখানে এইরি মনে করেন সম ঘনত্ববিশিষ্ট ভূমিরূপগুলির প্রোথিত অংশের গভীরতার ভিত্তিতে অভিকর্ষ বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয় । iii. প্রাট তার ধারণা গাণিতিক ও জ্যোতির্বিদ্যাসংক্রান্ত গবেষণার ভিত্তিতে প্রস্তাব করেন, যেখানে এইরি তার মতবাদ প্রাটের ধারণাকে সমালোচনা করে কয়েকটি বাস্তব ঘটনার ব্যাখ্যার ভিত্তিতে উপস্থাপন করেন । iv. প্রাটের ধারণা যেখানে প্রতিপূরণ নিয়মের (Law of compensation) ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সেখানে এইরির ধারণা পদার্থের ভাসমানতার ধর্মের (Law of Floatation) ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত । v. প্রাটের ধারণা অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় প্রতিবিধান তলটি অবস্থিত; যেখানে এইরির ধারণা অনুযায়ী ভূ-গর্ভের বিভিন্ন গভীরতায় প্রতিবিধান তল অবস্থিত। vi. বোয়ি এর মতে প্রাটের ধারণা অভিন্ন গভীরতার ও ভিন্ন ঘনত্বকে নির্দেশ করে; যেখানে এইরির ধারণা অভিন্ন ঘনত্ব ও ভিন্ন পুরুত্বকে নির্দেশ করে ।
➲ সমস্থিতি সংক্রান্ত প্রমাণ : ভূমিভাগের কোথাও উত্থান আবার কোথাও অবনমন সমস্থিতির নীতিকেই প্রমাণ করে। বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিকদের গবেষণার সুবাদে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমানে সমস্থিতি সংক্রান্ত বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেমনঃ i. গ্রীনল্যান্ড, বাল্টিক সাগর, কানাডিয়ান শিল্ড প্রভৃতি স্থানে মহাদেশীয় হিমবাহের গলনের ফলে অন্তর্বর্তী হিমযুগে স্থানগুলির উত্থান ঘটেছে। ii. ভূতাত্ত্বিকদের মতে, গ্রীনল্যান্ডের বর্তমান বরফের আস্তরণ যদি গলে যায় তবে গ্রীনল্যান্ডের মধ্যভাগের নিম্নভূমি ও প্রান্তভাগের উচ্চভূমির সরার মতন গঠন ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হবে। iii. ভূমিরূপবিদ কিং কানাডার উত্তর-পূর্ব দিকে সমস্থিতির প্রভাবে ভূমিভাগের উত্থান সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেন। iv. ইটালীর পো নদীর বদ্বীপ ও ভারতের গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে পলি সঞ্চয়ের কারণে ভূমির অবনমনের প্রমাণ পাওয়া যায়। গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে সমুদ্রের গভীরে স্থলচর প্রাণীর হাড়, কাঠের খন্ড পাওয়া গেছে।
➲ সমস্থিতিক ভারসাম্য বা সমন্বয় (Isostatic Adjustment) : বিভিন্ন কারণে ভূ-ত্বকের কোনো অংশের ভারসাম্য নষ্ট হলে আবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় তা ভারসাম্যে ফিরে এসে সমস্থিতি বজায় রাখে, এই ঘটনাকে সমস্থিতিক ভারসাম্য বা সমন্বয় বলে। সমস্থৈতিক ভারসাম্যের সমগ্র প্রক্রিটিকে সিমাটোজেনি (Cymotogene) বলা হয়।
উদাহরণঃ উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে ভূ-আন্দোলনের ফলে কোন পর্বতের উত্থান ঘটলে পরবর্তী সময়ে তার ওপর চলে আবহবিকারের কাজ। আবহবিকারের ফলে ভূমিভাগের নগ্নীভবন ঘটে এবং এই নগ্নীভূত পদার্থ বাহিত হয়ে ভূভাগটি নিচু হয় এবং ভার লাঘব হয়। অন্যদিকে ক্ষয়ীত পদার্থ প্রাকৃতিক শক্তির ফলে বাহিত হয়ে নদী বা সমুদ্রের তলদেশে জমা হয়ে নদী বা সমুদ্রের তলদেশে চাপের বৃদ্ধি ঘটায় এবং ভূভাগের অবনমন ঘটায়। এই ভাবে দুই ভূমিভাগের মধ্যে একটা সমস্থিতির সমন্বয় তৈরি হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধারনা তাত্ত্বিকভাবে সমন্বয়সাধন ঘটলেও বাস্তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব, কারণ সব স্থানে ভূভাগ স্থিতিশীল অবস্থায় বিরাজমান করেনা।
➲ সমস্থিতিক ভারসাম্যের ওপর ভূপৃষ্ঠের ক্ষয় ও সঞ্চয়ের ভূমিকা : ক্ষয় ও সঞ্চয় এই দুটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া অন্যান্য প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলির মতোই ভূমিরূপ গঠন ও ভূ-প্রকৃতি পরিবর্তনে সাহায্য করে। ক্ষয়ের ফলে শিলার বেধ কমে যায়। ভূমিভাগের উচ্চতা হ্রাস পায়। তবে সমস্থিতিজনিত ভারসাম্যের প্রভাবে ভূমিভাগের উচ্চতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা ততোটা কমেনা। বিপরীতভাবে, সঞ্চয়ের ফলে ক্ষয়জাত পদার্থ ভূপৃষ্ঠের উপর যেখানে জমা হয়, সেখানে ভূমিভাগের বেধ বেড়ে যায়। ফলে পদার্থের মোট ভর বৃদ্ধি পায় ও ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সমস্থিতির কারণে বাড়তি ভরের জন্য ওই ভূমিভাগ নিচের দিকে কিছুটা বসে যায়। এজন্য দীর্ঘকালীন ক্ষয় সত্ত্বেও প্রাচীন পর্বতগুলি সমতলে পরিণত হয়নি। যেমন এখনও আরাবল্লী, ইউরাল, অ্যাপেলেশিয়ান পর্বতমালা নিজস্ব উচ্চতা ও বন্ধুরতা রক্ষা করছে।
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার
♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)
➲ সমস্থিতিক সাম্য (Isostatic Equilibrium): কোনো অঞ্চলে সমস্থিতিক বিচ্যুতি শূন্য ও অভিকর্ষ বিচ্যুতি থাকলে তাকে সমস্থিতিক সাম্য বলে।
➲ সিমাটোজেনি (Cymatogeny) : সমকালীন ক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে পার্বত্য ভূমিরূপের উত্থানকে সিমাটোজেনি বলে।
ধারণার প্রবক্তাঃ বিখ্যাত ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক কিং (Lester Charles King) 1959 সালে “Trans. Geol. Soc. South Africa” নামক জার্নালে প্রকাশিত তার “Denudational and tectonic relief in south-eastern Australia” নামক গবেষণাপত্র সিমাটোজেনি সম্পর্কিত ধারণার ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
ব্যাখ্যাঃ লেস্টার কিং -এর মতে, পার্বত্য ভূমিভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার ফলে উৎপন্ন পলি পার্শ্ববর্তী সাগরে সঞ্চিত হয় এবং ক্রমশ ঐ স্থানটি নীচু হতে থাকে। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চল ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় হালকা হয় এবং এর উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ভূ-অভ্যন্তরস্থ তরল পদার্থ সমুদ্রের অবনমিত ভূত্বকের নীচ থেকে পার্বত্য ভূভাগের নিম্নভাগে পরিবাহিত হয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ক্ষয়ের সাপেক্ষে পার্বত্য ভূমিভাগের উত্থানকে সিমাটোজেনি বলা হয়।
➥ সমস্থিতিক প্রতিস্থাপন (Isostatic Rebound) : ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ের ফলে অথবা হিমবাহ গলিত হয়ে ওজন হ্রাসের ফলে ভূত্বকের যে পুনরুত্থান ঘটে, তাকে সমস্থিতি প্রতিস্থাপন বলে। এটি অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে পদার্থের সান্দ্রতা (viscosity) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্লিসটোসিন যুগে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বরফের গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার ফলে ভূত্বকে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলি কয়েক শত মিটার বসে গিয়েছিল। উষ্ণ যুগের শুরুতে বরফ গলতে শুরু করে এবং মহাদেশীয় হিমবাহের গভীরতা হ্রাস পায়। এর ফলে ভারসাম্য রক্ষার তাগিদে ভূত্বক উঁচু হয়ে পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসতে সচেষ্ট হয় ।
➥ সমস্থিতিক বিচ্যুতি (Isostatic Anomaly বা ‘C’ Anomaly) : শিলাস্তরের ঘনত্বের পার্থক্যের ভিত্তিতে যখন অভিকর্ষ বিচ্যুতির সংশোধন করা হয়, তখন তাকে সমস্থিতিক বিচ্যুতি (Isostatic Anomaly) বা ‘C’ Anomaly বলা হয়।
বৈশিষ্ট্যঃ i. তাত্ত্বিক বিচ্যুতির তুলনায় প্রকৃত বিচ্যুতি কম হলে সমস্থিতিক বিচ্যুতি ঋণাত্মক হয়। যথা- নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল। ii. প্রকৃত বিচ্যুতি তাত্ত্বিক বিচ্যুতি অপেক্ষা বেশি হলে সমস্থিতিক বিচ্যুতি ধনাত্মক হয়। যথা- পরিণত ভূভাগে শিল্ড মালভূমি ও সমুদ্র তলদেশ।
⟽ পূর্ববর্তী পোস্ট : নীতি আয়োগ
❁❁❁❁❁❁❁❁❁❁