DEVELOPMENT OF LANGUAGE
DEVELOPMENT OF LANGUAGE
প্যাডাগোজি (Pedagogy) হল এমন একটি বিষয়বস্তু যেটি শিক্ষকতার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষারর ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় । প্রাথমিক টেট, উচ্চ প্রাথমিক টেট, সেন্ট্রাল টেট এমনকি স্কুল সর্ভিস টেট এর ক্ষেত্রে প্যাডাগোজি বিষয়টি থেকে বিষয় ভিত্তিক প্যাডাগোজি (Subject Pedagogy) এর উপর প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক ব্যাপার । প্রতিযোগী শিক্ষার্থীদের বিষয়টি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা প্রদানের জন্য এবং প্রতিটি বিষয়ের বিষয় ভিত্তিক প্যাডাগোজি তুলে ধরতে আমরা আরম্ভ করেছি Pedagogy বিভাগটি । এই বিভাগের একটি উপ-বিভাগ হলঃ বাংলা প্যাডাগোজি । বাংলা প্যাডাগোজিতে এখন আমরা আলোচনা করবো “ভাষার বিকাশ” [DEVELOPMENT OF LANGUAGE] নামক টপিকটির প্রথম অংশ । এই বিভাগের প্রতিটি টপিক দীর্ঘ আলোচনাযুক্ত, তাই একাধিক অংশে টপিক আলোচনা থাকবে । পরবর্তী বা পূর্ববর্তী অংশে যাবার জন্য পোস্টে উল্লিখিত নির্দেশ তথা Next Part বা Previous Part এ ক্লিক করুনঃ ।
প্রসঙ্গতঃ বিষয়টি মনে রাখার সুবিধার জন্য প্রতিটি টপিক আলোচনা করা হবে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ।
ভাষার বিকাশ
⟽ Previous Topic : ভাষা শিক্ষার ভিত্তি
১. কোন সময় থেকে মানুষের ভাষার বিকাশ আরম্ভ হয় ?
উঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নবজাতকরা মাতৃভাষার জ্ঞান নিয়ে পৃথিবীতে আসে । কারণ মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় মাতৃভাষার বিভিন্ন মেলোডি শুনতে পায় । আমাদের সারা জীবনে বিভিন্ন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে এটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে । ২০০৮ সালে প্রকাশিত “Auditory development in the fetus and infant” নামক গ্রন্থে কিছু গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে জরায়ু তে থাকা কালীন শিশুর মাতৃভাষার বোধ আরম্ভ হয় ।
২. বয়সের ভিত্তিতে মাতৃ ভাষার বিকাশ পর্যায়কে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ?
উঃ বয়সের ভিত্তিতে ভাষার বিকাশ পর্যায়কে দুইটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়, যথাঃ অ) প্রথম বাল্যকাল এবং আ) মধ্য বাল্যকাল ।
৩. প্রথম বাল্যকালের সময়সীমা কত বছর পর্যন্ত ধরা হয় ?
উঃ প্রথম বাল্যকালের সময়সীমা ধরা হয় জন্ম থেকে প্রায় ৬ বছর বয়স পর্যন্ত সময়কাল কে ।
৪. প্রথম বাল্যকালে শিশুর ভাষা বিকাশের পর্যায়গুলি কিকি ?
উঃ বয়সের ভিত্তিতে ভাষা বিকাশের পর্যায়কে মূলতঃ ০-১ বছর বয়স্কাল, ১-২ বছর বয়স্কাল, ২-৩ বছর বয়স্কাল, ৩-৫ বছর বয়স্কাল এই চার ভাগে ভাগ করা যায় ।
প্রাথমিক টেট প্রস্তুতির জন্য ক্লিক করুনঃ
উচ্চ প্রাথমিক টেট প্রস্তুতির জন্য ক্লিক করুনঃ
৫. শিশুর জন্মের পর কিভাবে পারিপার্শ্বিক পরিজনের সাথে প্রতিক্রিয়া করে ?
উঃ শিশুর জন্মের পর পারিপার্শ্বিক পরিজনের সাথে প্রতিক্রিয়া করার জন্য ভাষা হিসাবে কান্না কে অবলম্বন করে । শিশুদের ক্ষুধা কিংবা অস্বস্তি অনুভবের ফলে কান্না পায় । সেই কান্নাটি একটি ভাষা । অনেক ক্ষেত্রে তারা বিরক্ত হয়ে খুব নরম কিংবা বোতলের ভেতর জল ঢালার ফলে সৃষ্ট শব্দের ন্যায় শব্দ করে । তাদের চারপাশে থাকা বিভিন্ন আকর্ষণীয় বস্তুর দিকে তাকিয়ে সেই সব শব্দ বেশি করে উচ্চারণ করে ।
৬. শিশু কোন সময়ে তাদের মনের ভাব প্রকাশে বিভিন্ন ধরনের কান্না আয়ত্ব করে ?
উঃ ১-৫ মাস বয়সে শিশু তাদের মনের ভাব প্রকাশে বিভিন্ন ধরনের কান্না আয়ত্ব করে । এই সময়েই শিশু হাসতে শেখে ।
৭. কোন সময়ে শিশু মাতৃ ভাষা ও অন্য ভাষার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে ?
উঃ শিশুরা ছয় মাস বয়সে অন্যান্য ভাষার শব্দের সাথে নিজেদের মাতৃভাষার শব্দের পার্থক্য সঠিকভাবে ধরতে পারে । মাতৃভাষার শব্দের সাথে অন্যান্য ভাষার শব্দের পার্থক্য নিরূপণের ক্ষেত্রে ছয় মাস বয়সী শিশুরা খুব অনুভুতিপ্রখর হয় । তাই তাদেরকে সর্বজনীন উচ্চারণ ধ্বনির বিশারদ বলা হয় ।
৮. শিশু কোন সময়ে তাদের নাম ধরে ডাকলে বুঝতে পারে ?
উঃ ৬-৭ মাস বয়সের শিশুদের নাম ধরে ডাকলে শিশুরা তাতে সাড়া দেয় । এই সময়ে পিতা-মাতার ডাকের পার্থক্য বুঝতে পারে এবং আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া করে ।
৯. শিশু কোন সময় সার্বজনীন শব্দাংশ (Syllable) উচ্চারণ করতে সক্ষম হয় ?
উঃ সাত থেকে আট মাসের শিশুরা হঠাৎ করেই বা-বা-বা, নে-নে-নে এবং দে-দে-দে সিলেবলগুলি (এগুলিই প্রকৃত সিলেবল) ভাঙা-ভাঙা বা আধো-আধো করে বলতে থাকে । উল্লেখ্য, সকল ভাষায় সেই শব্দগুলি একই এবং বিশ্বের সকল ভাষাতে একই উচ্চারণ ধ্বনি রীতি দিয়ে এই শব্দাংশ গঠিত।
১০. শিশু কোন সময়ে শব্দ উচ্চারণ করতে পারে ?
উঃ শিশু ৭-১০ মাস বয়সে শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, এই সময় মা, বাবা ইত্যাদি শব্দগুলি উচ্চারণ ক্ষমতা গড়ে উঠে কিন্তু তা স্পষ্ট ও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বোধগম্য হয় না ।
১১. কোন সময়ে শিশু বাচনিক যোগযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয় ?
উঃ ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে শিশু বাচনিক যোগযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয় । এই সময়ে তারা বিভিন্ন শব্দ অনুকরণ করে উচ্চারণ করতে আরম্ভ করে ।
১২. শিশুর ভাষার বিকাশে অবাচনিক স্তর থেকে বাচনিক স্তরে উন্নয়নে প্রভাববিস্তারকারী বিষয়গুলো কি ?
উঃ শিশু মূলতঃ এক বছরের মধ্যে ভাষার বাচনিক স্তর আরম্ভ করে । এই সময়কালে শিশুরা উপলব্ধি করতে পারে বড়ো রা তাকে কি বলছে বা বলতে চাইছে । শিশুর এরুপ ধী শক্তির উন্নয়নে তার নিকটবর্তী বয়ষ্কদের যতো অধিক সম্ভব শিশুর সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে হবে । শিশু যতো বেশি শুনবে ততো শব্দগুলি বুঝে তা উচ্চারণ করার প্রচেষ্টা করবে ।
১৩. শিশু কোন সময়ে তাদের শ্রুতিগোচর শব্দ উচ্চারণ করা আরম্ভ করে ?
উঃ শিশু তার ১২ মাস বয়স থেকেই তাদের শ্রুতিগোচর শব্দ উচ্চারণ করা আরম্ভ করে ।
১৪. শিশু তার ভাষা শিক্ষার জন্য কোন বয়সে যোগাযোগের জন্য অবাচনিক ও বাচনিক উভয় কৌশল অবলম্বন করে ?
উঃ শিশু তার ভাষা শিক্ষার জন্য ১-২ বছর বয়সে যোগাযোগের জন্য অবাচনিক ও বাচনিক উভয় কৌশল অবলম্বন করে ।
১৫. ১-২ বছর বয়সে শিশু কতগুলি শব্দ শিখতে পারে ?
উঃ ১-২ বছর বয়সে শিশু তাদের উপলব্ধির পার্থক্য অনুযায়ী ৫০ থেকে ৫০০ টি শব্দ শিখতে পারে । এই শিখন আবার শিশুর সাথে তার পিতামাতা বা পরিবার পরিজনের বার্তালাপের উপর নির্ভর করে । এই বয়সে শিশু তার যোগাযোগ স্থাপনে বাচনিক প্রবণতার উপর অধিক গুরুত্ব দেয় ।
১৬. কোন সময়কে শিশুর ‘শব্দভান্ডার বিস্ফোরণ’ কাল বলে ?
উঃ শিশুর ২ বছর বয়স্কাল কে ‘শব্দভান্ডার বিস্ফোরণ’ কাল বলা হয় । এই সময় শিশুর ভাষা বিকাশের পরিমাণ প্রায় ২৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং শিশু প্রায় ৬০০০ শব্দ শিখে নেয় ।
১৭. প্রথম শব্দ হিসাবে শিশু কোন শব্দ উচ্চারণ করে ?
উঃ শত শত বছর ধরে বিজ্ঞানীরা তাদের শিশুদের প্রথম উচ্চারিত শব্দগুলি ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন । অধিকাংশ শব্দই বিভিন্ন বস্তুর নাম । খাবারের মধ্যে জুস, কোকিস; শরীরের অঙ্গের মধ্যে চোখ, নাক; বস্ত্রের মধ্যে ডায়াপার, মোজা; যানবাহনের মধ্যে গাড়ি, নৌকা; খেলনার মধ্যে পুতুল, ব্লক; গৃহস্থালি বস্তুর মধ্যে বোতল, লাইট । অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাণীর নামও শিশুরা উচ্চারণ করে । যেমন কুকুর, বিড়াল এবং মানুষের মধ্যে বাবা, মা, বেবি । এছাড়া অনেক একশন/মশান শব্দও শিশুরা উচ্চারণ করে । যেমন ‘উপরে’, ‘বন্ধ’, ‘খোলা’ এবং ‘যাও’। বিশেষায়িত কারী কিছু শব্দও এক বছরের শিশুরা বেশি উচ্চারণ করে। যেমন, ‘গরম’, ‘ঠাণ্ডা’, ‘নোংরা’, ‘বেশি’ এবং ‘শেষ’। শিশুরা রুটিন শব্দগুলিও ব্যবহার করে । যেমন, ‘হ্যাঁ’, ‘না’, ‘চাই’। অনেক সময় এক-শাব্দিক পর্যায়ের শেষের দিকে ‘এদিকে থাকাও’ ও ‘এটি কি?’ ধরনের দ্বি-শাব্দিক পর্যায়ের প্রথম দিকের শব্দ গুচ্ছগুলি শিশুরা উচ্চারণ করে । যাকে আমরা Telegraphic Stage বলি ।
১৮. পর্যায়ি কথন (Turn-taking) বলতে কি বোঝায় ?
উঃ ভাষা শিখনের জন্য দুই ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথনের সময় এক ব্যক্তির কথা বলার পর তার প্রত্যুত্তরে অন্য ব্যক্তির কথা এবং পরবর্তীতে আবার প্রথম ব্যক্তির কথা, এভাবে চলতে থাকা কথোপকথন কে পর্যায়ি কথন বলা হয় । যখন দুই ব্যক্তির মধ্যে আর কোন কথা থাকে না তখন ইহা সমাপ্ত হয় ।
১৯. শিশু কোন বয়সে পর্যায়ি কথন (Turn-taking) কৌশলে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে ?
উঃ দুই থেকে তিন বছর বয়সে । এই কৌশল সহজভাবে শিশুর ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
২০. পর্যায়ি কথন (Turn-taking) সংগঠন এর বিষয়ে প্রথম কে আলোকপাত করেন ?
উঃ আমেরিকান সমাজবিদ হার্ভে স্যাক্সস্ (Harvey Sacks) ১৯৭০ এর প্রথম দিকে পর্যায়ি কথন সংগঠন এর বিষয়ে প্রথম আলোকপাত করেন ।
২১. কোন বয়সে শিশু যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসাবে বিমূর্ত চিন্তা কে কাজে লাগাতে পারে ?
উঃ তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে শিশু যোগাযোগ এর মাধ্যম হিসাবে বিমূর্ত চিন্তা কে কাজে লাগাতে পারে । এই সময় শিশু সংযুক্ত শব্দ, বাক্য এবং সংযোগকারী শব্দের দ্বারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাক্য গঠন করতে পারে ।
২২. শিশুর মধ্য বাল্যকাল সময়সীমা কত বছর ?
উঃ শিশুর মধ্য বাল্যকাল সময়সীমা ৬ বছর থেকে ১০ বছর সময় পর্যন্ত ধরা হয় ।
২৩. মধ্য বাল্যকালের প্রথমার্ধে শিশুর ভাষার বিকাশ কিরকম হয় ?
উঃ মধ্য বাল্যকালের প্রথমার্ধে ৬ বছর বয়সে শিশু শব্দভান্ডার পৌঁছায় কয়েক হাজারে । এই সময় শিশু যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে জটিল বাক্য বলতে পারে এবং সামান্য পঠন ক্ষমতা আয়ত্ব করতে পারে ।
২৪. ৬ বছর বয়সে শিশু সম্ভাব্য শব্দভাণ্ডারের কত শতাংশ শব্দ শিখতে পারে ?
উঃ M.E. Smith ১৯২৬ সালে প্রকাশিত তার “In Investigation of the Development of the Sentence and of the Extent of the vocabulary of Young children” এ ৬ বছর বয়সে শিশু সম্ভাব্য শব্দভাণ্ডারের ২২ শতাংশ (২৫৬২ টি) শব্দ শিখতে পারে বলে উল্লেখ করেন ।
২৫. ৭ বছর বয়সে শিশুর ভাষা বিকাশের কোন দিকের উন্নয়ন ঘটে ?
উঃ ৭ বছর বয়সে শিশু একাধিক বাক্য পড়তে পারে, সময় বলতে পারে এবং কোন বর্ণ উল্টো লেখার অভ্যাস ত্যাগ করে । মনোবিদ R. Seashore এর মতে এই সময় শিশু প্রায় ২১,২০০ শব্দ আয়ত্ব করে নেয় । ➣ Next Part