উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাসএকাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার

Endogenic Process Weathering Part-II

Endogenic Process Weathering Part-II

পরিবর্তন হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের সিলেবাস । নতুন সিলেবাস অনুযায়ী সমগ্র উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলকে চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত করা হয়েছে, যেখানে একাদশ শ্রেণীতে দুটি এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টার অন্তর্ভুক্ত । উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোলের নতুন সিলেবাসের ভিত্তিতে ভূগোলের সেমিস্টার ভিত্তিক বিষয়বস্তুকে আলোচনা করার জন্য আমরা একাদশ ভূগোল নির্যাস : দ্বিতীয় সেমিস্টার বিভাগের সূচনা করি । এই বিভাগে এখন আমরা আলোচনা করবো একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারের Physical Geography এর Unit-II এর Geomorphic Process অধ্যায় এর অন্তর্ভুক্ত টপিক Endogenic Process Weathering Part-II সম্পর্কিত প্রথম অংশ । সমগ্র অধ্যায়টি বেশ কয়েকটি পর্বে শেষ হবে, তাই পরবর্তী পর্বটি পড়ার জন্য Next Part এ ক্লিক করো । তাহলে আর অপেক্ষা না করে চলো আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ➦


বহির্জাত প্রক্রিয়া : আবহবিকার (Weathering) দ্বিতীয় পর্ব 

⟽ Previous Part

B. কেলাস জনিত আবহ বিকার : শিলাস্তরের ফাটলের ভেতর জল অথবা লবণ সমৃদ্ধ দ্রবণ কেলাসিত হলে ফাটলের গায়ে চাপের সৃষ্টি হয় ফলে শিলাস্তর ভেঙ্গে যায় । এরূপ কেলাস জনিত আবহবিকার তিন প্রকার, যথাঃ
a. জলের কেলাসনে সৃষ্ট যান্ত্রিক আবহ বিকার : জল বরফে পরিণত হলে 9/10 % আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং -22o c উষ্ণতায় প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে 30 হাজার পাউন্ড চাপ প্রয়োগে সক্ষম, ফলে স্বভাবিক ভাবে শিলা স্তর ভেঙ্গে যায় । জলের কেলাস তিন প্রকারের হয়, যথা – (i. বরফ কীলক প্রক্রিয়া , (ii. তুষার চাড় প্রক্রিয়া এবং (iii. সূচী হীম প্রক্রিয়া ।

b. লবণ কেলাসন প্রক্রিয়ার যান্ত্রিক আবহ বিকার : ফাটল যুক্ত ও সছিদ্র শিলা স্তরে লবণ সমৃদ্ধ দ্রবণ কেলাসিত হয়ে শিলায় এরূপ আবহবিকার ঘটে । বিশেষত উপকূল অঞ্চলে লবণের প্রভাব খুব বেশী । বাড়ির দেওয়ালে লবণের কেলাস জনিত আবহ বিকার দেখা যায় । মিশরের কারনাকের মন্দিরে এর প্রভাব লক্ষ্যনীয় ।
c. রাসায়নিক পরিবর্তন জনিত কারণে আবহবিকার : জলযোজন ও জারণের কারণে আয়তন জনিত যান্ত্রিক চাপের প্রভাবে শিলাস্তরে উপস্থিত রসায়নিক পদার্থের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই ধরণের আবহবিকার সংঘটিত হয় ।

C. চাপ হ্রাস জনিত আবহবিকার : চাপ হ্রাসের ফলে সাধারণত দুটি প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়, যথাঃ
a. শিটিং (Sheeting) : অবরোধী চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মস্তক চাপ হ্রাস পেলে শিলার প্রসারণ বৃদ্ধি পেয়ে ভূমি ভাগের সমান্তরালে শিলাস্তর কতগুলি পাতলা স্তরে বিভক্ত হলে তাকে চাদর বলে । বেলে পাথর, চুনা পাথর, গ্রানাইট ইতাদি শিলায় এই আবহবিকার দেখা যায় । মার্কিন গবেষক জনস (Richard Henry Jahns) 1943 সালে শিলা স্তরে শিটিং এর ক্ষেত্রে দায়ী 7টি প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন ।

b. স্পলিং (Spalling) : অবরোধী চাপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মস্তক চাপ হ্রাস পেলে শিলার প্রসারণ বৃদ্ধি পায় এবং অনেকসময় বিস্ফোরণের মাধ্যমে শিলাস্তর বিশৃঙ্খল ভাবে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে একে স্পলিং বলে l
চাপহ্রাস জনিত আবহবিকার অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার মাউন্ট বাফেলোতে দেখা যায় ।
চাপ হ্রাস হেতু আবহবিকার সমন্ধে ড্যাপলস এর সূত্র : আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক ড্যাপলস (Edward Charles Dapples) 1959 সালে “Basic Geology for Science and Engineering” নামক গ্রন্থে চাপ হ্রাস হেতু যে সূত্রটির প্রস্তাব করেন সেটি হলঃ Unloading Earth ∞ as Thickness of Sheet = DT∞ 1.51
(যেখানে T=Thickness of Rock ; D= Depth ) তবে এই সূত্র 380 কিঃমিঃ গভীরতা পর্যন্ত প্রযোজ্য ।

☛ রাসায়নিক আবহবিকার (Chemical Weathering) : অম্ল, জল, অক্সিজেন প্রভিতি রাসায়নিক পদার্থগুলির পারস্পরিক বিক্রিয়ার ফলে শিলাস্তর বিয়োজিত হয়ে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থায় পরিবর্তনের মাধ্যমে যে আবহবিকার সংঘটিত হয় তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে ।
Arthur Holmes এর মতে ‘রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলা উপাদানগুলির পরিবর্তিত ও দ্রবীভূত হওয়াকে বলা হয় রাসায়নিক আবহবিকার ।’
রাসায়নিক আবহবিকার এর প্রক্রিয়া : রাসায়নিক আবহবিকার প্রধান 5টি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়, এগুলি হলঃ
i. দ্রবণ (Solution) : শিলা স্তরের প্রথম রাসায়নিক বিক্রিয়া ও বিয়োজন এর প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচিত হয় দ্রবণ প্রক্রিয়া । যে প্রক্রিয়ায় খনিজ পদার্থ সরাসরি জল দ্বারা দ্রবীভূত না হয়ে শিলাস্থিত কোন খনিজ রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে এক বিশেষ অবস্থায় এসে জলে দ্রবীভূত হয় সেই প্রক্রিয়াকে দ্রবণ বলে । যেমন বৃষ্টির জল কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সঙ্গে মিশে কার্বনিক অ্যাসিড সৃষ্টি করে । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া অধিক কার্যকর । ক্যারেল্স (R.M. Carrels) 1960 সালে প্রকাশিত তার “Solutions, minerals, and equilibria” নামক গ্রন্থে চুনাপাথর অঞ্চলে দ্রবণ প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী 7টি চলকের কথা উল্লেখ করেন ।
ii. জারণ (Oxidation) : রাসায়নিক আবহবিকারের পাঁচটি প্রক্রিয়ায় মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি হল জারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অক্সিজেন । বিভিন্ন প্রকার জলে দ্রবীভূত অতিরিক্ত অক্সিজেন শিলা মধ্যস্থিত খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত হয়ে শিলা বিয়োজনের সূচনা করলে তাকে জারণ বলে । জারণ সর্বজনীন প্রক্রিয়া হলেও অক্সিজেন মিশ্রিত জল কার্বনিক অ্যাসিডের মতো নানারকম খনিজের সাথে বিক্রিয়া ঘটাতে পারেনা ।

একাদশ শ্রেণীর দুটি সেমিস্টারের In Details আলোচনা রয়েছে ইবুক দুটিতে 📥

♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, প্রথম সেমিস্টার

♦️ইবুক : উচ্চ মাধ্যমিক ভূগোল নির্যাস : একাদশ, দ্বিতীয় সেমিস্টার)

iii. অঙ্গার যোজন (Carbonation) : রাসায়নিক আবহবিকারের পাঁচটি প্রক্রিয়ায় মধ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াটি হল অঙ্গার যোজন, যার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল কার্বন ডাই-অক্সাইড । শিলাস্থিত বিভিন্ন প্রকার খনিজের সঙ্গে কার্বন ডাই-অক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কার্বনেট উত্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে অঙ্গার যোজন বলে । আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে এই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সর্বাধিক ।
iv. জলযোজন (Hydration) : রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা মধ্যস্থ খনিজের সঙ্গে জল যুক্ত হয়ে শিলার সাংগঠনিক পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন খনিজ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কে জলযোজন বলে ।
বার্গার (Berger) এর মতে ‘জলের অণুগুলো খনিজ পদার্থের অণুগুলির সঙ্গে একটি বৈদ্যুতিক প্রবাহ সৃষ্টি করে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়, ফলে খনিজগুলির গ্রন্থি বন্ধন আলগা হয়ে সহজেই বিয়োজিত হয়ে পড়ে ‘এরই নাম জল যোজন । ক্যালসিয়াম সালফেট এর সঙ্গে জল যুক্ত হয়ে জিপসাম সৃষ্টি করে ।
v. আর্দ্র বিশ্লেষণ (Hydrolysis) : শিলা মধ্যস্থ জল খনিজের সঙ্গে মিশে একাধারে খনিজ পদার্থের অণুগুলির বিয়োজন ও বিক্রিয়া ঘটিয়ে যে প্রক্রিয়ায় নতুন যৌগ গঠন করে তাকে আর্দ্র বিশ্লেষণ বলে । এই প্রক্রিয়ায় জল ও হাইড্রোজেন হাইড্রোজেন আয়ন (H++) এবং হাইড্রোক্সিল আয়নে (OH-) ভেঙে যায় । শিলাস্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে জলের অণুগুলো সংশ্লিষ্ট আয়ন অনুসারে পৃথক হয়ে আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটায় ।
vi. চেলেশন (Chelation) : চেলেশন হলো একপ্রকার জৈব প্রক্রিয়া। এর এজেন্ট হলো মূলত উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজাত পদার্থ। যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজাত পদার্থ অদ্রবনীয় কঠিন খনিজ কেলাস থেকে ধাতব ক্যাটায়ন ও জৈব পদার্থ একত্রে বের করে নিয়ে আসে তাকে চেলেশন বলে। লেহম্যান (D.S. Lehman) 1963 সালের 3রা মার্চ প্রকাশিত তার গবেষণাপত্র “Some Principles of Chelation Chemistry” তে চেলেশন সম্পর্কে বলেন “চেলেশন হল একটি জটিল জৈব প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ধাতব ক্যাটেশনগুলি হাইড্রোকার্বন অণুতে একত্রিত হয়”। “Chelation” শব্দটি গ্রীক শব্দ “Kelation” থেকে উদ্ভূত হয়েছে যার অর্থ হলঃ “Pliers” (“সাঁড়াশি বিশেষ” বা “ভাঁজ করার যন্ত্র”) ।

PSC Geography Study Materials

☛ জৈব ও জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার (Biological or Bio-chemical Weathering) : যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া ছাড়াও উদ্ভিদ ও প্রাণীমণ্ডল বিভিন্নভাবে শিলার বিচূর্ণনে বা বিয়োজনে অংশগ্রহণ করে শিলাকে বিয়োজিত করে । অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল যান্ত্রিক ভাবে বা রাসায়নিকভাবে শিলামণ্ডলের বিয়োজনে অংশগ্রহণ করে শিলাকে বিয়োজিত করে সেই প্রক্রিয়াকে জৈব ও জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার বলা হয় ।
প্রকার : অংশগ্রহণের প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে এই ধরনের আবহবিকারকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়, যথাঃ i. জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার ও ii. জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার ।
জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার (Bio-Mechanical Weathering) : যে প্রক্রিয়া জীব নিজের প্রয়োজনে সক্রিয়ভাবে শিলাস্তরকে খণ্ড-বিখণ্ডিত করে শিলাস্তরকে বিয়োজিত করে সেই প্রক্রিয়াকে জৈব-যান্ত্রিক আবহবিকার বলা হয় । শিলাস্তরে বৃক্ষ জন্মালে স্বাভাবিকভাবেই তার শেকড় শিলা ফাটলে প্রবেশ করে । শেকড় বৃদ্ধির সাথে সাথে শিলাস্তরে উদ্ভিদ যে বল প্রয়োগ করে তার প্রভাবে ফাটলও বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তরের বিচূর্ণণকে তরান্বিত করে । আবার বিভিন্ন প্রাণী যেমন ইঁদুর, ছুঁচো, কেঁচোখরগোশ, প্রেইরী কুকুর তাদের বাসা নির্মাণের জন্য গর্ত খুঁড়ে এই ধরনের আবহবিকারকে তরান্বিত করে ।
জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার (Bio-Chemical Weathering) : শিলাস্তরে সঞ্চিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে নির্গত জৈব অ্যাসিড শিলাস্তররের আবহবিকারকে তরান্বিত করলে সেই প্রক্রিয়াকে জৈব-রাসায়নিক আবহবিকার বলা হয় । এই ধরনের জৈব অ্যাসিড ম্যাগনেশিয়াম ফেলস্পার ও সালফারের সঙ্গে অধিক কার্যশীল । ➣ Next Part : Soil Forming Process

PSC Geography Study Materials


⟽ Previous Post : PSC GEO MCQ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page