Netaji, Son of Mother-India
Netaji, Son of Mother-India
পৃথিবীর আনাচে-কানাচে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে বহু ঘটনা । ইতিহাসের পাতায় নিরন্তর লিপিবদ্ধ হয়ে চলেছে সেই ঘটনাবলীর কড়চা । বিশ্ব ও ভারতের ইতিহাসের পাতা উল্টে সেইসমস্ত ঘটনাবলীগুলির ভিড় থেকে কিছু মণিমানিক্যের অনুসন্ধানের জন্য “আজকের দিনে” বিভাগের সূচনা । এই বিভাগে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসে ঘটে যাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা হবে । জানুয়ারি মাসের বিভাগে Netaji, Son of Mother-India নামক পোস্টের মাধ্যমে এখন আমরা আলোচনা করবো ভারত মাতার সুপুত “নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু” সম্পর্কে । তাহলে আর অপেক্ষা না করে আমরা মূল বিষয়ে প্রবেশ করি ⬎
নেতাজী,ভারত মাতার সুপুত্র
⟽ Previous Post : স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কিত কুইজ
আজ 23 শে জানুয়ারি, 1897 সালের আজকের দিনে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রদেশের ওড়িশা বিভাগে (বর্তমান ভারতে ওড়িশার) কটক শহরে দক্ষিণ-রাঢ়ী কায়স্থ পরিবারে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন তার পিতা “রাই বাহাদুর” জানকী নাথ বসু এবং মাতা প্রভাবতী দেবীর নবম সন্তান এবং ষষ্ঠ পুত্র সন্তান । পাঁচ বছর বয়সে 1902 সালে Protestant European School (P. E. School) এ সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রারম্ভিক শিক্ষা আরম্ভ হয় এবং 1909 পর্যন্ত সেখানে শিক্ষা গ্রহণ করে 1909 সালের জানুয়ারিতে কটকের Ravenshaw Collegiate School এ ভর্তি হন । 1913 সালে Ravenshaw Collegiate School থেকে তিনি মেট্রিকুলেসন (বর্তমান মাধ্যমিক) পরিক্ষায় সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় হয়ে উত্তীর্ণ হন । 1913 সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং এখানে তিনি “বড়দাদা” লোকমান্য তিলক ও “ছোটদাদা” অরবিন্দ ঘোষ এর সংস্পর্শে আসেন । 1915 সালে তিনি এখান থেকে প্রথম বিভাগে ইন্টার মিডিয়েট পাশ করেন এবং দর্শন নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হন । কিন্তু মিঃ ও. নামক শিক্ষকের সাথে বিতর্কের জেরে সুভাষ চন্দ্রকে কলেজ থেকে বরখাস্ত করা হয় । ফল স্বরূপ সুভাষ চন্দ্রের শিক্ষা থমকে যায়, অবশেষে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এর সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সুভাষ চন্দ্রের বরখাস্ত তুলে নিলে 1917 সালে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন । 1919 সালে এখান থেকে তিনি দর্শনে স্নাতক হন । স্নাতকোত্তর স্তরে দর্শন পড়ার সুযোগ না থাকায় তার পিতা মাতা তাকে Indian Civil Service (ICS) পরিক্ষার প্রস্তুতির জন্য লন্ডনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন । 1920 সালে তিনি ICS পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন, কিন্তু সমসাময়িক কালে (1919 সালের 13 ই এপ্রিল) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ICS এর পদ পরিত্যাগ করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে অংশগ্রহন করেন । 1923 সালে তিনি সর্ব ভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন । 1924 সালে সুভাষ চন্দ্র কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটি কর্পোরেশন এর CEO পদে নির্বাচিত হন । জাতীয় সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য তিনি 1925 সালে গ্রেফতার হন এবং মান্দালয়ে কারারুদ্ধ হন । 1927 সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি পুনরায় সর্ব ভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন এবং বঙ্গীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের পদে উত্তীর্ণ হন । 1930 সালে তিনি কলকাতার মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হন । 1938 সালে তিনি সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি পদে উত্তীর্ণ হন এবং “জাতীয় পরিকল্পনা কমিটি” গঠন করেন । 1939 সালে গান্ধীজীর সাথে মতানৈক্যর জেরে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং All India Forward Bloc নামক নতুন দল গঠন করেন । এই সময় তিনি গৃহবন্দী হলে 1941 সালে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে গোপনে তিনি দেশ ত্যাগ করেন । 1941 সালের নভেম্বরে তিনি জার্মানি পৌঁছান এবং সেখান থেকে তিনি রেডিও মারফত তার বক্তব্য উপস্থাপন করে গৃহবন্দী থেকে পলায়নের কথা প্রকাশ করেন । 1942 সালে প্রকাশিত হয় তার “The Indian Struggle” নামক বইটি, যা 1920 থেকে 1942 সালের ভারতের মুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে লেখা, স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটিশ সরকার বইটিকে অবৈধ ঘোষণা করে । 1943 সালে সুভাষ চন্দ্র জাপানে পৌঁছান এবং সেখানে অপর স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী বসুর সাথে মিলিত হন । রাসবিহারী বসুর সহায়তায় 1942 সালে 45,000 ভারতীয় বন্দীদের নিয়ে রাসবিহারী বসুর গড়া Indian National Army এর সেনাদের নিয়ে জাপানে তিনি গঠন করেন আজাদ হিন্দ বাহিনী । আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনারা সুভাষ চন্দ্রকে “নেতাজী” নামে অভিহিত করলে তিনি অচিরেই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নামে খ্যাত হন । 1943 সালের অক্টোবরে নেতাজী অক্ষ শক্তির সমর্থনে প্রাদেশিক সরকার গঠন করেন । “Give me blood, and I shall give you freedom!” বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন । 1943 সালের ডিসেম্বরে নেতাজীর সেনা আন্দামান নিকোবর দ্বীপে পৌঁছান এবং স্বাধীন সরকার গঠন করেন । তিনি দ্বীপ দুটির নাম পরিবর্তন করে স্বরাজ ও শহীদ দ্বীপ হিসাবে নতুন নামকরণ করেন । 1944 সালের 6 ই জুলাই আজাদ হিন্দ রেডিও থেকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি গান্ধীজীকে “Father of the Nation” বলে উল্লেখ করেন । নেতাজী ভারতের স্বাধীনতা ইংরেজদের থেকে ছিনিয়ে নিতে ভারতের পূর্ব প্রান্তে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) প্রদেশ থেকে ব্রিটিশদের উচ্ছেদ করে ভারত সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি কক্সটন নিজের দখলে নেন এবং সেখান থেকে ঐতিহাসিক “দিল্লী চলো” ডাক দেন । শাহ নাওয়াজ খানের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতে প্রবেশ করে । কিন্তু এই সময় অক্ষ শক্তির পরাজয় ঘটলে এবং জাপান সরকার আত্ম সমর্পণ করলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর রসদে টান পড়ে ফলে বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে । 1945 সালে আজাদ হিন্দ সরকারের পতন ঘাটে। 1945 সালের 3 রা আগস্ট নেতাজী সিঙ্গাপুরে অবস্থান কালে জেনারেল ইসোদা এর মেসেজ পায় যাতে নেতাজীকে জাপান অধিকৃত বর্তমান ভিয়েতনামের সাইগঙ্গ এ যাওয়ার অনুরোধ করা হয় । নেতাজী আত্মসমর্পণ না করে সিঙ্গাপুর বিমান বন্দর থেকে সাইগঙ্গ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেন । কিন্তু ফরমোসা (বর্তমান তাইওয়ান) এর তাপেই বিমান বন্দরে 1945 সালের 18 ই আগস্ট বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু ? ? হয় ? ? বলে সেই সময় বিশ্বে খবর ছড়িয়ে পড়ে । 1946 সালের Figgess Report, 1956 সালের Shah Nawaz Committee এর রিপোর্ট এবং 1970 সালের Khosla Commission এর রিপোর্ট নেতাজীর মৃত্যুর সমর্থন করলেও Justice Mukherjee Commission 2006 সালের 17 ই মে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করে সংসদে বলে “Bose did not die in the plane crash and the ashes at Renkoji temple are not his”. কিন্তু ভারত সরকার মুখার্জী কমিশনের রিপোর্ট তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখান করে । নেতাজীর অনুরাগী হিসাবে আমরা অবশ্যই সত্য উদ্ঘাটনের অপেক্ষায় থাকব । ………
➣ সংগ্রহ করুনঃ : “ভারতের প্রধানমন্ত্রীর গল্প” eBook
তথ্যসূত্র : “Subhas Chandra Bose and His Contribution in Indian Freedom Struggle” : Dr. Deepti Tiwari; Assistant Professor H.O.D., Department of History, Magadh Mahila College,Patna University
“NETAJI’S LIFE and WRITINGS” : WWW.HINDUSTANBOOKS.COM
“আমি সুভাষ বলছি” :
Wikipedia Public Domain